মোঃ মামুন রশীদ ॥ নিজেদের কাছেই হয়তো এখন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে ফলাফলটা। ইতোমধ্যেই নিজেদের গ্রুপপর্বটা শেষ করেছে ক্রোয়েশিয়া। অন্যতম ফেবারিট ও শক্তিশালী আর্জেন্টিনার গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখবে তারা, সেটা হয়তো কেউ ভাবেননি। কিন্তু ক্রোয়েটরা ঠিকই তা করে দেখিয়েছে। এমনকি আর্জেন্টাইনদের বিপক্ষে বিপুল বিক্রমে খেলে ৩-০ গোলের বড় জয় পেয়েছে। তিন ম্যাচেই জিতে এখন দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে মুখোমুখি হবে ডেনমার্কের। দলের নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট হলেও খেলোয়াড়দের কোচ জ¬াটকো দালিচ সতর্ক করেছেন আত্মতৃপ্তিতে না ভোগার জন্য। তিনি খেলোয়াড়দের সেই সতর্কবাণীতে জানিয়েছেন, গ্রুপপর্বের এমন ঈর্ষণীয় সাফল্য সবাই ভুলে যাবে যদি রবিবার দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ডেনিশদের কাছে হার দেখতে হয়। ‘ডি’ গ্রুপে নিশ্চিতভাবেই সেরা দল ছিল আর্জেন্টিনা। এমনকি বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম ফেবারিট গত আসরের রানার্সআপরা। কিন্তু মন জয় করেছে ক্রোয়েশিয়া। যদিও তাদের নিয়ে কেউ তেমন চিন্তা-ভাবনা পর্যন্ত করেনি। কিন্তু গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে নাইজিরিয়াকে ২-০, দ্বিতীয় ম্যাচে শক্ত প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনাকে নাজেহাল করে ৩-০ এবং শেষ গ্রুপ ম্যাচে আইসল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়েই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে তারা। সেখান থেকে আর্জেন্টিনা কোনক্রমে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে। এমন উদ্ভাসিত সাফল্যে এখন আনন্দধারা বইছে ক্রোয়েট শিবিরে। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রাপ্তি ঘটেছে তাদের। তিন ম্যাচে মাত্র ১ গোল হজম করেছে তারা। কিন্তু প্রতিপক্ষের জালে প্রবেশ করিয়েছে ৭টি। এমনটা হয়তো নিজেরাও ভাবতে পারেনি।
এমন সাফল্যের পর নিশ্চিতভাবেই দলের খেলোয়াড়রা এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছে। কিন্তু সেটা দলের পারফর্মেন্সের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন শঙ্কায় এখন কোচ দালিচ। এ কারণেই তিনি দলের শিষ্যদের সতর্ক করে দিলেন গ্রুপপর্বের নৈপুণ্য ভুলে গিয়ে পরবর্তী ডু অর ডাই ম্যাচ নিয়ে সিরিয়াস হয়ে উঠতে। কারণ ২০১৬ সালের ইউরোতেও গ্রুপপর্বে দুরন্ত ছিল ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপপর্ব থেকে পূর্ণ পয়েন্ট অর্জন করেছিল এবং হারিয়েছিল স্পেনকে। কিন্তু পরে পর্তুগালের কাছে নকআউট পর্বে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনভাবেই দেখতে চান না দালিচ। তিনি বলেন, ‘ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের পাতায় থাকার জন্য এখন পর্যন্ত সবকিছুই দারুণ হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি ডেনমার্কের বিপক্ষে না জিততে পারি এবং সবাই জানতে চাইবে তোমরা বিশ্বকাপে কী করেছিলে? তখন আমরা কী উত্তর দেব? আহামরি কিছুই বলার থাকবে না। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব অতিক্রম করা। কিন্তু সেটা আমাকে কিংবা দলকে অত বেশি তুষ্ট করতে পারেনি। আমাদের বিপক্ষে ডেনমার্ককে পেয়েছি আমরা এবং এটাই এই মুহূর্তের সত্য। তাদের বিপক্ষে আমাদের জিততে হবে। নয়তো সবাই ভুলে যাবে গ্রুপপর্বে আমরা কি করেছিলাম।’ ডেনিশ মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন ইতোমধ্যেই আলো ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন। তার বিষয়ে দালিচ বলেন, ‘তিনি নিশ্চিতভাবেই ডেনমার্কের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু আমরা নিশ্চয় একজনের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক নজরদারি করতে পারি না। আমরা লিওনেল মেসি ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে যেভাবে খেলেছি সেভাবেই খেলতে চাই। সবচেয়ে জরুরী বিষয় যেটা তা হচ্ছে পুরো দলকেই একসঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে। শুধু একজনের ওপর কিংবা মিডফিল্ডারদের ওপর নির্ভর করা যাবে না। পুরো দলকেই কাজটা সমন্বিতভাবে করতে হবে।’