ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার

আফগানিস্তানে বিরামহীন যুদ্ধ ॥ মাসুল গুনছে শিশুরা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৯ জুন ২০১৮

আফগানিস্তানে বিরামহীন যুদ্ধ ॥ মাসুল গুনছে শিশুরা

আফগানিস্তানের সরকার ও তালেবানের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও বেসামরিক লোকরা তালেবান এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলার সম্মুখীন হচ্ছে। ১১ জুন কাবুলে আত্মঘাতী এক বোমা হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। জালালাবাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ফরেন পলিসি। জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে উৎসুক ও ছুটির দিনগুলোতে জনসমাগম হয় এমন এলাকায় হামলা চালায়। যদিও উভয়পক্ষ ঈদ উদযাপনকে সামনে রেখে তিনদিনের অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছে তারপরও তালেবানের মুখপাত্র মার্কিন সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসে সমঝোতায় না আসা এবং সব বিদেশী সৈন্য দেশ ত্যাগ না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আফগানিস্তানে অসমাপ্ত যুদ্ধের ফলে শিশুদের রক্ষা করার প্রতিষ্ঠানগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে। এ মাসে প্রকাশিত ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগান সেন্ট্রাল স্যাটিসটিকস অরগানাইজেশনের মতে, সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই স্কুলে যেতে পারছে না। এই সংখ্যা প্রায় ৩৭ লাখ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, গড়পড়তা ২১ লাখ শিশু শিশুশ্রমে লিপ্ত (জাতিসংঘের পপুলেশন ডিভিশনের হিসেবে এই সংখ্যা ২৫ লাখ)। যাদের বয়স ছয় থেকে ১৪ বছর। তাদের অনেকে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এমন বিপজ্জনক কাজ করে। তারা রাস্তায় ভারী বোঝা বহন করে, ঢালাই করে, ভারি যন্ত্রপাতি পরিচালনা করেন ক্ষতিকর বর্জ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য কারখানাগুলোতে কাজ করে। ১৯৭০ এর দশক থেকে শুরু হওয়া অশান্তির জন্য দেশটির শিশুদের প্রজন্মকে মূল্য দিতে হচ্ছে। শিশুদের স্কুলে যেতে না পারার অন্যতম কারণ সহিংসতা। আফগানিস্তানে সংঘাত ও মুক্তিলাভের মধ্যে চূড়ান্ত অবস্থায় যাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাপী শিশুদের রক্ষায় তহবিল পুনর্নির্মাণের চেষ্টায় কোটি কোটি ডলার অনুদান পেয়েছে দেশটি। তারপরও যারা স্কুলে যাচ্ছে, রাস্তায় কাজ করছে অথবা কারখানায় কর্মরত ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িতে থাকতে পারছে না তাদের জন্য অনিশ্চিত ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ মার্কিন সরকারের মূল্যায়নে স্বীকার করা হয়েছে যে, ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মধ্যে দেয়া সহায়তা সংস্থাগুলোর লক্ষ্য ও স্থিতিশীলতার অভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। গত ডিসেম্বরে পশ্চিম কাবুলের একটি বাজারে তিনটি মেয়েকে প্লাস্টিক ব্যাগ বিক্রি করতে দেখা গেছে। তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। যেখানে চরম দারিদ্র্যতার কারণে তারা নিজেদের ও তাদের ভাইবোনের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য কাজ করতে হয়। তারা বলেন, বেশিরভাগ সময় আমাদেরকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা ও অপহরণের বিষয়ে আতঙ্কিত থাকতে হয়। আমাদের সঙ্গে কায়ানাত নামে একটি মেয়ে ছিল। একদিন সে হারিয়ে যায়। পুলিশ কখনোই আর তাকে খুঁজে পায়নি। সাদাফ (১১) জানান, আমরা তিনজন হকার ছিলাম। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যে ছিল সে হঠাৎ একদিন হারিয়ে গেল। কর্মজীবী এই শিশুদের অনেকে এখন অনুভব করে যে, তাদের কাজ তাদের পরিবারের বেঁচে থাকার জন্য অবদান রাখছে। সাদাফ ব্যাখ্যা করেন, রাস্তায় যখন কাজ করি তখন অনেক উদ্বেগ নিয়ে কাজ করতে হয়। এই শিশুদের স্কুলের শিক্ষাবর্ষ শুরু হবার পর থেকে নিরাপদে লেখাপড়া করার কথা। নওরোজ উৎসবের মাধ্যমে আফগানিস্তানে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। পার্সিয়ান নববর্ষ হচ্ছে নওরোজ উৎসব।
×