ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জেলে ডিভিশন চেয়ে সাঈদীর রিট হাইকোর্টে খারিজ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৯ জুন ২০১৮

জেলে ডিভিশন চেয়ে সাঈদীর রিট হাইকোর্টে খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জেলখানায় ডিভিশন দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করেছে হাইকোর্ট। সাঈদীর পক্ষে করা রিটের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। সাঈদীর পক্ষে করা রিট আবেদনের ওপর রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের শুনানি শেষ হয় বুধবার। শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য রাখে। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদ- দিলেও আপীলে তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয় সর্বোচ্চ আদালত। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, ধমান্তরিত লুটপাটের মতো ২০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। বুধবার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। অন্যদিকে সাঈদীর পক্ষে আবেদনের শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন। গত ২৪ জুন কারাগারে দ্বিতীয় শ্রেণীর বন্দী মর্যাদা ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে সাঈদীর বড় ছেলে শামীম সাঈদীর পক্ষে ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেন। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ৪৭ (২) ও (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে যুদ্ধাপরাধীদের রিট চলতে পারে না। সংবিধানে এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাধা থাকার কারণে রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। পরে রিটটি খারিজ করা হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৭ ক এর (২) দফায় বলা হয়েছে, এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীমকোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না। আর অনুচ্ছেদ ৪৭ এর (৩) দফায় বলা হয়েছে, এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য বা অন্য কোন ব্যক্তি, ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠন কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দ-দান করিবার বিধান-সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোনো বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না। অন্যদিকে রিটকারীর আইনজীবী তানভীর আহম্মেদ আল আমীন বলেন, ওনার (সাঈদী) চিকিৎসা দরকার এবং জেলকোড অনুসারে তিনি ডিভিশন-২ পান। তিনি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে ভুগছেন। ওনার হার্টে ছয়টি রিং পরানো আছে। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদ- প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপীল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করে। পরে আপীলের রায় রিভিউ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও সাঈদী পৃথক আবেদন করেন। ২০১৭ সালের ১৫ মে রিভিউর রায়ে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদ- বহাল রাখে আপীল বিভাগ। এর আগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন তিনি। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
×