ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া সফল হলে আওয়ামী লীগ টিকবে না

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৯ জুন ২০১৮

জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া সফল হলে আওয়ামী লীগ টিকবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনে জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে এ প্রক্রিয়া সফল হলে আওয়ামী লীগ ৩ দিনও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু মুক্তি পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। ফখরুল বলেন, আইনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, রাজনৈতিক কারণে তাঁকে বন্দী করা হয়েছে, তাই রাজনৈতিকভাবে তাঁকে মুক্ত করতে হবে। তাই কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও জেলে যাওয়ার আগে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তাই এখন সবাই সচেতন হয়ে উঠেছেন আজকে দেশের যে অবস্থা তা চলতে দেয়া যায় না। ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। আজকের নির্বাচন কমিশন একটি অর্থব কমিশন। তারা সরকারের নির্দেশমতো কাজ করছে। এই কমিশনকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে, যে নির্বাচনে ভোটাররা নির্ভয়ে গিয়ে ভোট দিতে পারবে। এছাড়া নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার বদল হবেই, তখন সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আসছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে। কিন্তু শুধু রোহিঙ্গারাই নয়, গোটা দেশের মানুষই আজ শরণার্থী হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মহাসচিবসহ সকলের আসা উচিত বাংলাদেশের কী অবস্থা তা দেখতে। কী কারণে বাংলাদেশের মানুষ শরণার্থী হয়েছে তা তাদের দেখা উচিত। কারণ, একটাই আওয়ামী লীগ আজকে গায়ের জোরে দেশের ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। ‘আজকে দেশ স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’ বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনাদের রাজপথে নেমে আসতে হবে এবং জমায়েত বাড়াতে হবে। হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ নিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে হবে তা না হলে আন্দোলন সফল হবে না। সেজন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। সবাইকে সুসংগঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ৫শ’ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ১৮ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। আজকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা কেউ বাসায় থাকতে পারছে না। বেশির ভাগ নেতাকর্মী এখানে-ওখানে শরণার্থী হয়ে গেছে। ফখরুল বলেন, দেশে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে এটা শুধু বিএনপির নয়, এই মহাসঙ্কট হচ্ছে পুরো জাতির। কারণ, এই জাতির অর্জন আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালের আগে আমরা যে আন্দোলন করেছি, সমস্ত রাস্তাঘাট সেদিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে আন্দোলন এখন আর হচ্ছে না। ২০১৪ সালের পর আমরা পারিনি, কেন পারিনি তারও নানা কারণ আছে। তিনি বলেন, আমরা রাজপথে জীবন দিতে পারি, কিন্তু যুবকদের তো আসতে হবে আমাদের সঙ্গে? যুবদল ও ছাত্রদলকে রাজপথে নেমে আসতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে। দলে আমরা যারা বয়ষ্ক তারা সবাই বাইরে যাব। আপনারাও ঘরের ভেতর থেকে বাইরে যান। ২০ জন ২০ জন করে বাইরে যান। দেখেন পরিস্থিতি কী হয়। বিএনপি যদি রাস্তায় নামে সরকারের দাঁড়ানোর উপায় থাকবে না। ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতা মেজর মিজানকে গ্রেফতার করে তারা বলছে, মিজান নাকি নাশকতার নির্দেশ দিয়েছেন। তার কথোপকথন যেটা বেরিয়েছে সেখানে কোথাও এমন কিছু বলা হয়নি। আবার যেটা বেরিয়েছে সেটা তারই নাকি এ নিয়েও সন্দেহ আছে। তাই আমরা মেজর মিজানের অবিলম্বে মুক্তি চাই। আর এ ধরনের কর্মকা- থেকে সরকারকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। আয়োজক সংগঠনের নেতা ও যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ। গাজীপুরে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে- খসরু ঃ গাজীপুরে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে- বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। আমির খসরু বলেন, গাজীপুরে ভোট ডাকাতি হয়েছে। এই সরকার গণমাধ্যমকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যে তারা সত্য কথা তুলে ধরতে পারছে না। তাদের ডেকে নিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমকেও ধ্বংস করতে চায়। তিনি বলেন, গাজীপুর ও খুলনায় আওয়ামী লীগ নির্বাচন করেনি। নির্বাচন করেছে পুলিশ। আর তাদের সহযোগী ছিল নির্বাচন কমিশন। আমির খসরু বলেন, আমাদের সামনে এখন দু’টি পথ। আর তা হচ্ছে আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করে আনা এবং দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা। এর জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ড. কাজী মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
×