ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠক

তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার পুলিশের গুলিবর্ষণ, রোহিঙ্গা কিশোর আহত

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ জুন ২০১৮

তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার পুলিশের গুলিবর্ষণ, রোহিঙ্গা কিশোর আহত

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ে সৌজন্যমূলক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজারের বিজিবির আঞ্চলিক সদর দফতরে এ বৈঠক শুরু হয়। দু দেশের সীমান্তে শান্তি বজায় রাখাসহ নানা বিষয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছিল। ঠিক ওই সময়ে তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গুলি ছুড়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ সদস্যরা। এতে এক রোহিঙ্গা কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে স্থাপিত এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অথচ কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠকে রাখাইন অভ্যন্তরে জিরো লাইনে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের আরও ভিতরে ফেরত নেবে বলে বিজিপি প্রতিনিধিদল বিজিবিকে আশ্বাস দিয়েছেন। পতাকা বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিপির মংডু রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মা ঈন টুও। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম রাকিবুল্লাহ। দুপুর দুইটা পর্যন্ত চলা বৈঠকে, রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও দুই বাহিনীর মধ্যে তথ্য বিনিময়, যৌথ টহল, মাদক চোরাচালন প্রতিরোধ ও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আজিজ জনকণ্ঠকে বলেন, তুমব্রু জিরো লাইনে অবস্থান করা কয়েকজন কিশোর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পার্শ্বস্থ জঙ্গলে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গেলে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আনসার উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের পায়ে বিদ্ধ হয়। অপর কিশোররা তাকে উদ্ধার করে জিরো লাইনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে আসে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনরা ওই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সে জিরো লাইনে অবস্থান করা রোহিঙ্গা বস্তির জমির উদ্দিনের পুত্র। তাদের বাড়ি রাখাইন রাজ্যের রাইমনখালী এলাকায়। এ ঘটনার পর সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করেছে। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের কোনার পাড়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়া হবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) এমন আশ্বাসের কয়েক ঘণ্টা পরেই জ্বালানি কাঠ সংগ্রহে করতে যাওয়া এক রোহিঙ্গা শিশুর পায়ে গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)। বর্তমানে ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে দুপুরে বিজিবির সঙ্গে বৈঠকে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে আরও ভেতরে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দেয় বিজিপি। পতাকা বৈঠক শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় বিজিবি। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কক্সবাজারস্থ বিজিবির আঞ্চলিক সদর দফতরে দীর্ঘ সময় ধরে এ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিকেলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বিজিবির কক্সবাজার আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম রাকিবুল্লাহ। এ সময় তিনি বলেন, সীমান্তে ইয়াবাসহ চোরাচালান দমন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে দু দেশ সম্মত হয়। এ কারণে সীমান্তে নিয়োজিত দু দেশে সীমান্ত রক্ষীদের চলমান যৌথ টহল আরও জোরদার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই মাস পর পর এই বৈঠক হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে এসএম রাকিবুল্লাহ আরও বলেন, তুমব্রু কোনারপাড়ায় জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে কোন ধরনের মাইকিং ও সীমান্তে সেনা মোতায়েনের বিষয়েও কড়াভাবে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এই বিষয়টি মিয়ানমার প্রতিনিধিদল গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য রয়েছে দাবি করা হলে বিজিবি তা নাকচ করে দেন। তুমব্রু এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিনা উস্কানিতে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা সীমান্তে গুলি ছুড়েছে। এতে জিরো লাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ওই রোহিঙ্গারা ভয়ে বর্তমানে রাত জেগে পাহারায় রয়েছে। তারা আরও বলেন, ইতোপূর্বেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিজিপি সীমান্তে একাধিকবার গুলি ছুড়েছে। তারা বারবার একগুয়েমি দেখিয়ে চলেছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিনিধিরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন জিরো লাইনে অবস্থানকরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প। মিয়ানমার প্রতিনিধিদল ওইদিন আশ্বস্ত করেছিল ওসব রোহিঙ্গাকে শীঘ্রই তাদের দেশের ভেতরে নিয়ে যাবে। তবে চার মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও ওসব রোহিঙ্গাকে সীমান্তের জিরো লাইন থেকে রাখাইন রাজ্যের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। প্রতিশ্রুতির পরও ওই রোহিঙ্গাদের জিরো লাইন ছেড়ে বাংলাদেশে চলে যেতে ইতোপূর্বে কয়েকবার মাইকিং ও ভয়ভীতি দেখিয়েছে দেশটির সেনা।-বিজিপি।
×