ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মামুনুর রশীদ

দৃঢ় নেতৃত্বে শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৯ জুন ২০১৮

দৃঢ় নেতৃত্বে শেখ হাসিনা

মধুমতি আর বাইগারের প্রাঞ্জল স্রোতের স্পর্শে যার বেড়ে ওঠা, শৈশব থেকেই যার অদম্য সংগ্রামের মাঝে লালিত পালিত হওয়া। একটি বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের সান্নিধ্যে যার জীবন, একটি অসংলগ্ন জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে যার নেতৃত্ব শেখা। বিদ্যানিকেতন থেকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড সবটাই যার পদধূলিতে আজ বিখ্যাত হয়েছে। পিতা মুজিবের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গুণাবলী আজ বিশ্ব দরবারে উঁচু করেছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেতৃত্ব বিকাশে নিজেকে মেলে ধরেছেন আপনার মেধা, মনন আর যোগ্যতার মাপকাঠিতে। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ আজ উপচেপড়া উন্নয়নের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, সংস্কৃতির সবটাই তাঁর স্পর্শে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র এর পুরোটাই তাঁর রচিত। শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ গঠন আর গণতন্ত্র, দারিদ্র্য রোধ থেকে নারীর এগিয়ে যাওয়ার মসৃণ পথ তৈরি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন থেকে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত এর প্রত্যেকটাই হয়েছে শেখ হাসিনার হাতে। বাংলা চিরভাস্বর হয়েছে যেমন রবীন্দ্র-নজরুলের কীর্তিতে, তেমনি বাংলাদেশ পরিচিতির পূর্ণতা পাচ্ছে তাঁরই হাত ধরে। তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির হাল ধরেছেন। পাল উড়াচ্ছেন বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের। নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে। কখনও বঙ্গকন্যা, কখনও বীরসেনানী, আবার কখনও বা মানবতার জননী। তিনবারের সফলতম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে এগিয়ে চলেছেন দুর্বার গতিতে। দুর্দিনে বিভক্ত আওয়ামী লীগের পূর্ণতা দান থেকে শুরু করে অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীলে পরিণতি পেয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীনতার পর ভঙ্গুর একটি অবকাঠামো থেকে পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে পূর্ণতা দিতে গিয়ে অকাতরে সেই ভয়াল ১৫ আগস্টে পরিবারসহ আত্মদান করেছেন, তেমনিভাবে একটি পরাজিত ইতিহাসকে বিজয়ী বেশে ফিরিয়ে এনেছেন মাদার অব হিউম্যানেটি খ্যাত শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র থেকে প্রতিরক্ষা, অদক্ষ কুশলী থেকে দক্ষ সেনানায়ক তৈরি। সমুদ্র বিজয় থেকে ছিটমহলের অবসান হয়েছে তাঁর চেষ্টার কারণেই। সমুন্নত ও সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে শেখ হাসিনার হাত ধরে। জাতিসংঘ থেকে শান্তিনিকেতন, সাহিত্য থেকে রাজনীতি সবখানেই তাঁর পদচারণায় মুখরিত ‘বাংলাদেশ’। পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্র তাঁর দক্ষতার কৃতিত্বে মুগ্ধ। তিনি জাতীয়তাবাদ থেকে ইসলাম এর সবটুকু মিলিয়েই গড়ে তুলেছেন এক অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলা। নির্বাসন থেকে নির্বাচনে পেয়েছেন জনতার অবারিত ভালবাসা। ভালবাসার এক টুকরো করিডর থেকে চৌদ্দ শিকে সবটাই তাঁর বন্দনায় মগ্ন হয়ে আছে। তাঁর স্পর্শেই বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এক ‘রূপকথার গল্পের’ মতো একটি রোল মডেলে পরিণতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক সাফল্যে কুড়িয়েছেন বিশ্বনেতাদের প্রশংসা। পদ্মার বুকচিরে জেগে ওঠা বহুমুখী সেতু থেকে মেট্রোরেল। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে হাইওয়ে, ফ্লাইওভার থেকে রেলওয়ে এর সবটাই শেখ হাসিনার হাতে গড়া। সবুজের বুকে লাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ত্রিশ লাখ বুকের তাজা রক্ত আর দুই লাখ সম্ভ্রমের বিনিময়ে। নি¤œ থেকে মধ্যম আয়ের দেশও সুপ্রতিষ্ঠিত হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। পিতা মুজিব গেয়েছেন সাম্যের গান, কন্যা গেয়েছেন তারই জয়ও গান। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সোপান এর সবটাই দেশের প্রতি শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। শান্তি, শিক্ষা, সম্প্রীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। যা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসার কারণে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশী-বিদেশী ৪১টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। সম্প্রতি লিঙ্গ সমতার অনন্যতায় পেয়েছেন গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড। এর মধ্যে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের ক্ষমতাধর এক শ’ নারীর তালিকায় ৩৬তম স্থান অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে তিনি ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেছেন। বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া ও গবেষণার জন্য ভারতের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন। এমনকি ভারত বঙ্গবন্ধু ভবন নামেও একটি বিস্তর ভবন নির্মাণের জন্য কথা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। যেখানে শুধু আর্থ-সামাজিক সমস্যাই নয়, ইতিহাসের কলঙ্কও মোছার পথে। আমাদের দুর্ভাগ্য! দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির জন্ম হয়েছে। বিপক্ষ শক্তি ইতিহাস ঐতিহ্যকে নষ্ট করার চেষ্টায় সর্বদা নিয়োজিত। বাংলাদেশ ভবন সেদিক থেকে আমাদের প্রভাব ও ভালবাসাকেই বড় করে তুলবে। এই ভবনের ভেতর দিয়ে আমাদের দেশ ও জাতির অস্তিত্ব আরও একবার তার সাংস্কৃতিক শিকড়ে গিয়ে মিলবে। আজ দেশের ভেতর মৌলবাদের যে অশুভ প্রভাব এবং ছায়া তা থেকে মুক্তির জন্য এমন উদ্যোগের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার ভেতর যে সত্তা ও বাঙালীয়ানা সেটাই তাঁকে দিয়ে আজ এই কাজ করিয়ে নিচ্ছে। যা একদিন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। বাঙালী ও বাঙালীয়ত্বে একটু ঘাটতি নেই শেখ হাসিনার মধ্যে। লেখক : এমফিল গবেষক ও ছাত্র নেতা
×