ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ফতওয়ায়ে আলমগীরী গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৯ জুন ২০১৮

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ফতওয়ায়ে আলমগীরী গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য

(গত শুক্রবারের পর) এছাড়া ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে আর যে সমস্ত কুফরী কর্ম ও কালামের বিবরণ রয়েছে সেগুলোর মধ্য হতে আরও কয়েকটি হচ্ছে এরূপ : কারও মৃত্যুতে আল্লাহ্ তা’আলার ওপর অভিযোগ আনয়ন করা কিংবা আল্লাহ্ তা’আলাকে জালিম বলা, গণকের ভবিষ্যদ্বাণী ও গায়েবী খবর বিশ্বাস করা, যে সকল জিনিস আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও দেয়ার ক্ষমতা নেই, এমন জিনিস কেউ দিতে পারে বলে বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও নামে মানত করা কিংবা পশু যবেহ্ করা। হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসেবে বিশ্বাস না করা। ঈমান ও কুফরকে সমান মনে করা। হারাম বস্তু ভক্ষণ করার সময় অথবা মদ্য পানকালে বিসমিল্লাহ্ বলা। কুফরী শিক্ষা দেয়া প্রভৃতি। ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে বিধৃত কুফর বিষয়ক বিবরণের শেষে কুফর হতে রক্ষা পাবার জন্য হাদিস শরীফ হতে একখানি হাদিসের উদ্ধৃতি উপস্থাপন করা হয়েছে। তা হচ্ছে : প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়াদা করেছেন যে, যদি কেউ প্রত্যহ প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় এই দু’আ পাঠ করে, তা হলে সে অবশ্যই কুফরের বালা হতে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। আর তা হচ্ছে : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আন্উশরিকা বিকা শাইয়ান ওয়া আনা আ‘লামু ওয়া আস্তাগফিরুকা লিমা লা আ‘লামু- হে আল্লাহ্ আমি সকল প্রকারের শিরক হতে আপনার আশ্রয় নিচ্ছি এবং জানা-অজানা সকল প্রকারের গোনাহর জন্য আপনার নিকট আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ফতওয়ায়ে আলমগীরী গ্রন্থে বিধৃত সমস্ত মাস’আলা ও ফতওয়া সর্বযুগের জন্য সমানভাবে গ্রহণীয়। এই গ্রন্থকে ফিক্হর জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য গ্রন্থ বলা হয়ে থাকে। ইসলামের বিধি-বিধান জানতে হলে এবং কোন মাস’আলার ফয়সালা বা বিধিসম্মত সিদ্ধান্ত পেতে হলে ফতওয়ায়ে আলমগীরী অধ্যয়ন করা অত্যন্ত জরুরী। মুরতাদ বিষয়ক পরিচ্ছেদের শুরুতেই মুরতাদ কাকে বলা যাবে এবং কি কি কাজ করলে বা কোন কোন কথা বললে একজন মুসলিম তার অমূল্য সম্পদ ইমান হারিয়ে মুরতাদে পরিণত হবে তা সবিস্তার আলোচিত হয়েছে। মুরতাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে মুরতাদ বলা হয় তাকে যে দীন ইসলাম পরিত্যাগ করেছে। আরও বলা হয়েছে সেই ব্যক্তি মুরতাদ বলে পরিগণিত হবে যে মুসলিম হয়ে নিজের যবান দ্বারা সজ্ঞানে কুফরী কালাম উচ্চারণ করে। মুরতাদ হওয়ার জন্য আকিল ও বালিগ হওয়া শর্ত। কোন পাগল বা উন্মাদ ব্যক্তি এবং জ্ঞানবুদ্ধি বিকশিত হয়নি এমন কোন বালক-বালিকা মুরতাদ হিসেবে গণ্য হবে না। কখনও পাগল হয়ে যায় আবার কখনও সুস্থ হয়ে ওঠে এমন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে সে কোন অবস্থায় কুফরী করেছে। যদি সে সুস্থ অবস্থায় ইরতিদাদ অর্থাৎ ইসলাম হতে ফিরে যায় তবে সে মুরতাদ বলে গণ্য হবে আর যদি সে পাগল অবস্থায় ইসলাম হতে ফিরে যায় তবে তাকে মুরতাদ বলা শুদ্ধ হবে না। যদি কেউ নেশার ঘোরে এমন আচ্ছন্ন হয়েছে যে, তার হুঁশ-জ্ঞান একদম লুপ্ত হয়ে গেছে তবে তার ইরতিদাদ শুদ্ধ বলে গণ্য হবে না। কেউ যদি জবরদস্তির কারণে বা প্রাণের ভয়ে কুফরী করে, তবে সে মুরতাদ হবে না। ফতওয়ায়ে আলমগীরীর উপরিউক্ত পরিচ্ছেদে একজন মুসলিম কিভাবে মুরতাদে পরিণত হয় সে সম্পর্কে নানা মাত্রিক কারণ তুলে ধরে বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে মুরতাদ হিসেবে সাব্যস্ত ব্যক্তিকে কি কি সাজা দিতে হবে তারও বিধিসম্মত সিদ্ধান্ত বিধৃত হয়েছে। বলা হয়েছে, মুরতাদকে তিনদিন পর্যন্ত কয়েদ করে রাখা হবে। এই সময়ের মধ্যে সে যদি মুসলিম হয়ে যায় তবে ভালো কথা, আর যদি না হয় তবে তাকে কতল করা হবে অর্থাৎ তার জন্য মৃত্যুদ-। মুরতাদ কিভাবে পুনরায় মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে সে সম্পর্কে ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মুরতাদের পুনরায় মুসলিম হওয়া সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে তা এরূপ : সে কলেমা শাহাদাত মনেপ্রাণে এবং প্রকাশ্যে পাঠ করবে এবং ইসলাম ছাড়া অন্য সমস্ত ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি তার ঘৃণা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তা বর্জনের সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করবে। কোন ব্যক্তি যদি ইসলাম হতে ফিরে গিয়ে অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি মুরতাদ হয়ে তওবা করে আবার মুসলিম হয় এবং পুনরায় মুরতাদ হয়ে যায় তার ক্ষেত্রে কি হবে, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত বিবরণ ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে এইরূপে বলা হয়েছে : যদি মুরতাদ তওবা করে এবং ইসলামে ফিরে আসে, তারপর পুনরায় কাফির হয়ে যায় এবং এরপর তিন বার যদি সে এইরূপ করে এবং প্রতিবারই ইমামের নিকট অজুহাত খাড়া করে সময় প্রার্থনা করে, তবে ইমাম তাকে তৃতীয়বার তিন দিনের সময় দেবেন। এতদসত্ত্বেও যদি সে চতুর্থবার কুফরের দিকে ফিরে গিয়ে পুনরায় ইমামের নিকট একইভাবে সময় প্রার্থনা করে তবে ইমাম তাকে আর সময় দেবেন না। সুতরাং সে যদি মুসলিম হয়ে যায় তবে ভাল কথা, নতুবা তাকে কতল করা যাবে। ফতওয়ায়ে আলমগীরীর ঐ একই পরিচ্ছেদে একজন মুসলিম কি কি কারণে কাফির হিসেবে গণ্য হবে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। কোন ব্যক্তি মিথ্যা বললে আর তা শুনে কেউ যদি বলে আল্লাহ্ তোমার এই মিথ্যায় বরকত দান করুন, তবে তা কুফরী হবে। এমনি বিস্তর কুফরী কালামের বিবরণ বিধৃত হয়েছে ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে। ফতওয়ায়ে আলমগীরী অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ ফতওয়া গ্রন্থ। (সমাপ্ত) লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.)
×