ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৯ জুন ২০১৮

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

বিস্তর জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। বিপুল ভোটে সেখানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, দুই লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারও যথেষ্ট ভোট পেয়েছেন, এক লাখ ৯৭ হাজার ৮৯১ ভোট। প্রায় ৫৮ শতাংশ ভোট প্রদানের সংবাদটিও ইতিবাচক নিঃসন্দেহে। সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে এই দুজনের মধ্যেই। অন্য ৫ প্রার্থীর ভোটের হিসাবে আদৌ কোন খবর নেই। এ থেকে দেশে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে অন্য রাজনৈতিক দল বা শক্তির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ জামায়াতে ইসলামীর কথা বললেও মূলত দলটি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ইতোমধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করারও দাবি উঠেছে জনসাধারণের পক্ষ থেকে। জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর নির্বাচনে সমর্থন দিয়েছে বিএনপিকে। তাতেও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। এতদিনে বিএনপির বোঝা উচিত যে, আগামীতেও জামায়াতে ইসলামীর তথাকথিত ভোট ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে জতীয় সংসদ নির্বাচন অথবা অন্য কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সমীচীন হবে না। দলটির বরং ‘একলা চলরে’ নীতি অবলম্বন করাই শ্রেয়। তাতে তাদের ভোট বাড়বে। তরুণ প্রজন্ম, যারা আধুনিক ও জামায়াতবিরোধী, তারা ভোট দিতে পারে বিএনপিকে। দেশে বরাবরের মতোই বিজয়ী দল ও পরাজিত দলের মধ্যে বাহাস হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে। সত্যি বলতে কী, তৃতীয় বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো, যেখানে গণতন্ত্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও ভঙ্গুর, জয়-পরাজয় সহজে মেনে নেয়ার মন-মানসিকতা দেখা যায় না প্রার্থীদের মধ্যে। যেমন গাজীপুর নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। বিএনপি এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মিথ্যাচার করছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সরকার পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে সবার ওপর নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন হয়েছে চমৎকার। পর্যবক্ষেক দলও বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সর্বমোট ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৯টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বিভিন্ন অনিয়মের জন্য। এর বাইরে সেখানে সংঘাত, সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। যেটা সম্প্রতি ভয়াবহভাবে ঘটেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। সেই হিসাবে বলা যেতেই পারে যে, গাজীপুর নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ। ৬টি কেন্দ্রে ইভিএমের সাহায্যে ভোটগ্রহণ হলেও সেখানে কোন অভিযোগ ওঠেনি। জাল ব্যালট পেপার, জালভোট, সিলমারা ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্স ছিনতাই ইত্যাদির অভিযোগ ও উদাহরণ খুব কম। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে বুঝতে হবে যে, ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে ভোটারের উপস্থিতিতে জালভোট প্রদানের সুযোগ অনেকাংশে সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। নবনির্বাচিত মেয়র বিরোধী প্রতিপক্ষসহ সবাইকে নিয়ে একযোগে গাজীপুর সিটির উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছেন ইতোমধ্যে। আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি নির্বাচন। বিএনপি গাজীপুরের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলেও ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি ইতিবাচক। সেখানেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। নীরবে প্রচার-প্রচারণাও চলছে। নির্বাচন কমিশন খুসিক ও গাজীপুরের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সেখানে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে নিশ্চয়ই। রাজনৈতিক দলগুলোও বাদ যাবে না। সবাইকে এ কথা মানতে ও বুঝতে হবে যে, জনসাধারণ কোন নির্বাচনেই সংঘাত, সংঘর্ষ, মারামারি, হানাহানি, রক্তপাত চায় না। তারা চায় শান্তিপূর্ণ, অহিংস, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও তার প্রতিফলন ঘটেছে।
×