ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু হত্যার দায়ে রাজশাহীর আদালতে ফাঁসি ১, যাবজ্জীবন ১

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৮ জুন ২০১৮

শিশু হত্যার দায়ে রাজশাহীর আদালতে  ফাঁসি ১, যাবজ্জীবন ১

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পাবনার চাটমোহরের চাঞ্চল্যকর শিশু নূর হত্যা মামলায় মামলায় প্রধান আসামি সোহেলকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়েছে। অপর সহযোগী আবদুস সামাদের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। ঘটনার চার বছর পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার এই রায় ঘোষণা করেন। এই মামলা থেকে তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, বাদীর ভাগ্নে কবির হোসেন, সৎ মা আয়েশা বেওয়া ও প্রধান আসামি সোহেল বিশ্বাসের স্ত্রী আজিজা আক্তার রূপা। মামলার বিবরণে জানা যায়, পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের হারান মোড় মহল্লার ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের চার বছর বয়সী শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ্ আল নূর। সে জন্মসূত্রে গ্রীসের নাগরিক। গ্রীসে বসবাসের সময় আবুল হোসেনে ঘরে জন্ম হয় আব্দুল্লাহ আল নূরের। পরে তারা দেশে ফিরে পাবনার চাটমোহরের নিজ গ্রামে দ্বিতল বাড়ি তৈরী করে এখানে বসবাস শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২৫ জুন বেলা ১১টার দিকে নিখোঁজ হয় নূর। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নূরের সন্ধান মেলেনি। পরে পরিবারটি পুলিশসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন। দুইদিন পর ২৭ জুন বিকেলে স্থানীয় ভাদড়া খেলার মাঠ থেকে মস্তিষ্ক, দুটি হাত, নাড়িভুড়ি বিহীন এবং পায়ের কুকচির পাশে ধাঁরালো অস্ত্রের গভীর জখমে ক্ষত-বিক্ষত শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। একই স্থান থেকে অপর একটি ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় শিশুটির দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি হাত। শিশুটির বাবা আবুল হোসেন মরদেহে থাকা প্যান্ট দেখে তার সন্তান আব্দুল্লাহ্ আল নূরের লাশ সনাক্ত করেন। পুলিশ ওইদিনই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আবুল হোসেনের বাড়ির নীচতলার ভাড়াটিয়া সোহেল বিশ্বাসকে (৩৮) আটক করে। পুলিশ ভাড়াটিয়া সোহেল বিশ্বাসের ঘর ও ঘরের আশপাশে তল্লাশী চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের শিকার শিশুটির পিতা আবুল হোসেন বাদী হয়ে একই বছরের ২৭ জুন ভাড়াটিয়া সোহেল বিশ্বাসকে প্রধান অভিযুক্ত করে তার স্ত্রীসহ আটজনকে আসামী করে চাটমোহর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে চর্জশিট থেকে তিনজনকে বাদ দেয়া হয়। মামলার অপর আসামিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শর্তে জামিন লাভ করলেও মামলার প্রধান অভিযুক্ত সোহেল বিশ্বাস কারাগারে আটক ছিলেন। এছাড়া রায় ঘোষণার সময় জামিনে থাকা অন্য আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। মামলাটি প্রথমে পাবনা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ বিশেষ টাইব্যুনালে চলে। পরে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজশাহী দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে পাঠানো হয়। দ্রুত বিচার টাইব্যুনালের বিচারক সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ এবং মামলার নথি পর্যালোচনা সাপেক্ষে হত্যাকণ্ডের প্রায় ৪ বছর পর রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন, আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু। এদিকে মামলার বাদী আবুল হোসেন বলেন, একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী মিলে তার ছেলেকে হত্যা করলো। কিন্তু একজনের ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো, একজনকে খালাস দেওয়া হলো। তিনি এজন্য রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানান।
×