ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফল প্রত্যাখ্যান

গাজীপুরে আবার নির্বাচন দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ জুন ২০১৮

গাজীপুরে আবার নির্বাচন দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছে বিএনপি। বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তিনি অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তি দাবি করেন। ফখরুল বলেন, গাজীপুরে নির্বাচনের নামে শুধু একটি তামাশা হয়েছে। খুলনায় ভোট ডাকাতির নতুন কৌশল আবিষ্কার করে তা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও প্রয়োগ করা হয়েছে। তাই আমরা গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। সেই সঙ্গে আমরা এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া জনগণকে এই ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। ফখরুল বলেন, খুলনায় আওয়ামী লীগ নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরেও করেছে। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি বলেন, সরকারের নির্লজ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচন জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন ও নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্ব এই নির্বাচনগুলোর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হচ্ছে। ফখরুল বলেন, দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গ্রেফতার, সাদা পোশাকের পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, ভাংচুর, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে না দেয়াসহ বিভিন্নভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে। ফখরুল বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আবার প্রমাণ করল তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নির্লজ্জভাবে একের পর এক নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে সকল নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গাজীপুরের নির্বাচন আরেক কলঙ্কময় অধ্যায় সংযোজন করলো। এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সমাহিত করছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রায় প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মেজর (অব.) মিজানুর রহমানকে সরকার নীল নক্সার গল্প সাজিয়ে গ্রেফতার করেছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির এই নেতাকে সোমবার তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু এ অভিযোগ সত্য নয়। তাই আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আগের রাতেই অনেক ভোট দিয়ে দিয়েছে। এটা ভোটের পারসেনটেজ দেখলে বোঝা যায়। ভোটের টার্ন আউট কত আর টোটালটা কত? তা থেকেই বোঝা যায় যে আগের রাতে ভোট দিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি প্রার্থীর অনেক এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, অনেককে বাসা থেকেই বের হতে দেয়া হয়নি। আবার অনেককে পথেই বাধা দিয়ে রুখে দেয়া হয়েছে। সরকার, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন এক হয়ে কাজ করেছে। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, সরকার একটি নির্বাচনী প্রকল্প করেছে, তার অংশ হিসেবে খুলনায় যা ঘটিয়েছিল গাজীপুরেও একই কাজ করেছে। তিনি বলেন, পুলিশের একটি অংশ ও নির্বাচন কমিশন মিলে একের পর এক নির্বাচনকে কব্জা করে চলেছে। গণতন্ত্র ফিরে পেতে হলে এই নির্বাচনী প্রকল্পকে ভেঙ্গে দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
×