ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে বিরোধী নেত্রীর গুরুত্বারোপ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৮ জুন ২০১৮

  বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে বিরোধী  নেত্রীর গুরুত্বারোপ

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ দেশকে এগিয়ে নিতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, শিক্ষিত বেকার বেড়েই চলেছে। আগামী প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে মাদকের ছোবল থেকে তাদের রক্ষা করা যাবে না, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। তিনি দেশে বিনিয়োগে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী দিনে অংশ নিয়ে তিনি এ প্রস্তাব দেন। আলোচনায় অংশ নেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম, সরকারী দলের বেগম শিরীন নাঈম, বেগম আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, ছলিম উদ্দীন তরফদার, জয়া সেন গুপ্তা, মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, বেগম হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, শরিফ আহমেদ, গোলাম দস্তগীর গাজী, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান ও জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন। বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ আরও বলেন, যে দেশ ছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, সেই দেশে বাজেট তৈরি করা কঠিন কাজ। দেশকে কীভাবে এগিয়ে যাবে সে লক্ষ্য বর্তমান সরকার ও অর্থমন্ত্রী নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বড় বড় বাজেট দিয়ে যে দুরন্ত সাহস দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, তা বাস্তবায়নে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা অর্থমন্ত্রী বলেছেন। এটি ঠিক। তিনি বলেন, বাজেট একটি রাজনৈতিক দলের মৌলিক দর্শনের বহির্প্রকাশ ঘটে। সমৃদ্ধ দেশ গঠন এবং দেশকে আরও উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে এই বিশাল বাজেট দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাজেট ঘাটতি মোট আয়ের চার ভাগের এক ভাগ। এটি পূরণ করতে হলে সরকারকে অনেক কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এই সংসদই প্রথম সংসদ, যেখানে বিরোধী দল পাঁচটি বাজেটেই অংশ নিয়েছি, প্রত্যেক দিন সংসদে থেকেছে, সংসদ বর্জন করেনি। একটি অশালীন বক্তব্যেও আমরা দেইনি। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে অনুদানের আশা কোনদিনই শতভাগ পূরণ হয় না। দেশী বিনিয়োগ নেই, কর্মংস্থানের সুযোগ নেই, বিদেশী রেমিটেন্সও দিন দিন কমছে। এ কারণে এডিপি বাস্তবায়নে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। পদ্মা সেতুতে চার বার বরাদ্দ বাড়াতে হয়েছে। এক কোটি মানুষের আয়কর দেয়ার ক্ষমতা থাকলেও দেন মাত্র ১২-১৩ লাখ। এটা কেন? এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আয়কর বাড়লে সরকারের আয় তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পাবে। দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষের কোন কর্মসংস্থান নেই। কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ত না। কর্মসংস্থান হলে আমাদের দেশটা আরও শান্তিময় হবে। ব্যক্তিগত বিনিয়োগে সঙ্কট রয়েছে, আছে আস্থার অভাব। মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে কীভাবে দেশটা এগিয়ে যাবে? মানুষ বাড়ছে, কিন্তু জমি বাড়ছে না। তাই কৃষি জমি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিরোধী দলের নেতা আরও বলেন, দেশে অনেকে বিনিয়োগ করতে চান, এ জন্য জমি চায়, গ্যাস চায়, বিদ্যুত চায়। কিন্তু এটি পেতে তাদের বছরের পর বছর লেগে যায়। আর বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় অনেকে হয়রানির শিকার হয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করেন। আর বেকারত্ব বাড়ার কারণেই আজ ঘরে-ঘরে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। শিল্প-প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি সম্ভব। চীনে শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণেই সেখানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের উদ্ভাবিত পণ্য আজ সারাবিশ্বে বাজারজাত হচ্ছে। বাংলাদেশেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। তাহলে সন্ত্রাস ও মাদক বন্ধ হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করতে পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। অর্থমন্ত্রী আর নির্বাচন করবেন না বলেছেন, কিন্তু তার মতো জ্ঞানী ব্যক্তিকে আমরা ছাড়বো না। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে দ-িত খালেদা জিয়া দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। খালেদা জিয়ার পেয়ারে পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশ এখন অনেক অনেকগুণ এগিয়ে। এটাই তার মন খারাপের কারণ। এই অপশক্তির কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। খালেদা জিয়া মানুষ পোড়ানোর আত্মঘাতী কাজে হলুদ কার্ড পেয়েছেন। আগামী নির্বাচনে জনগণ তাকে আবারও লালকার্ড দেখিয়ে রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় জানাবে। কারণ দেশের জনগণ আজ শেখ হাসিনার পেছনে ঐক্যবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে আবারও বিপুল ভোটে হ্যাটট্রিক নির্বাচিত হয়ে দেশকে উন্নয়নশীল নয়, সারাবিশ্বের সামনে উন্নত দেশ হিসেবে উন্নীত করবেন।
×