ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ-ভারত নৌবাহিনীর সপ্তাহব্যাপী যৌথ টহল আজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৮ জুন ২০১৮

  বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ-ভারত নৌবাহিনীর সপ্তাহব্যাপী যৌথ টহল  আজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নৌবাহিনীর যৌথ টহল। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জলসীমা হতে এ টহল শুরু হয়ে আগামী ৩ জুলাই ভারতের বিশাখাপত্তমে গিয়ে শেষ হবে এই টহল। চট্টগ্রামের বানৌজা ঈশা খানের এসএমডব্লিউটি মিলনায়তনে বুধবার এই টহলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল সুনীল লানবা। সমুদ্র এলাকায় অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ, চোরাচালান ও মানবপাচার, জলদস্যুতা ও সন্ত্রাসবাদ এবং মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- বন্ধ করাই এই কার্যক্রমের লক্ষ্য। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানানো হয়, যৌথ এই টহলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ ও এমপিএ ( মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট) এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ ও এমপিএ অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশ ও ভারতীয় সমুদ্রসীমার নির্ধারিত এলাকার নিয়মিতভাবে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা আবু বকর’ ও ‘বানৌজা ধলেশ্বরী’ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘আইএনএস সাতপুরা’ ও ‘আইএনএস খেদমত’ অংশগ্রহণ করবে। দু’দেশের এই যৌথ টহল বঙ্গোপসাগরে নিজ নিজ জলসীমায় সমুদ্র বিষয়ক অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য আদান-প্রদান, তথ্যাদির সঠিক ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রপথে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনাকারী জাহাজসমূহ চিহ্নিতকরণ ও বিভিন্ন অপরাধ নিরসনকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক সমুদ্র নিরাপত্তা রক্ষা, সমুদ্র নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবেলা ও সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করছে উভয় পক্ষ। এছাড়া পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে দুইজন ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজযোগে এবং দুইজন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ভারতীয় নৌবাহিনী জাহাজযোগে বিশাখাপত্তম গমন করবেন। এ যৌথ টহল দুই দেশের জলসীমায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে নৌবাহিনী প্রধান উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, বিশাল সমুদ্র এলাকায় এককভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। এক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা, এ সংক্রান্ত তথ্যাদির আদান-প্রদান এবং সমন্বিত নজরদারি সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তাকে জোরদার করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, যা এ অঞ্চলের সমুদ্র বিষয়ক সচেতনতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ধরনের যৌথ টহল আয়োজনের জন্য তিনি বাংলাদেশ ও ভারতীয় সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে যৌথ এ টহলকে ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধানকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একটি যুগান্তকারী সময় পার করছে। বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ঐতিহাসিক এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি। ভারত সবসময়ই বাংলাদেশের সঙ্গে সহ-অবস্থানে থেকে বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সন্ত্রাসবাদ দমন, যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা, সমুদ্র সম্পদ রক্ষাসহ ব্লু ইকনোমির উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যেতে আগ্রহী। দুই দেশের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে নৌপ্রধানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এগিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া সফলভাবে শেষ করায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যকার চলমান এ ধরনের টহল, সমুদ্র মহড়া, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×