ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিবিএসের জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী ॥ গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর

চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭.৭০ থেকে ৭.৮০ শতাংশ হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৮ জুন ২০১৮

  চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭.৭০ থেকে ৭.৮০ শতাংশ হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মোট জনসংখ্যায় পুরুষ ও নারীর অনুপাতে ভারসাম্য বিরাজ করছে। তবে নারীরা এখনও উচ্চমাত্রায় পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বর্তমানে দেশের শতকরা ৮৫ দশমিক ৮ ভাগ পরিবারের খানা প্রধান হচ্ছে পুরুষ। অপরদিকে বর্তমানে ১০০ নারীর বিপরীতে পুরুষের আনুপাতিক সংখ্যা ১০০ দশমিক ২। ২০১৩ সালে নারী-পুরুষ এ লিঙ্গানুপাত ছিল ১০২ দশমিক ৬। গত ৫ বছর ধরে এ লিঙ্গানুপাত কমছে। উন্নত সমাজ ব্যবস্থার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ লিঙ্গানুপাত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে শিশু-কিশোর ৩০ জন। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের মোট প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার। পুরুষ ও নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮ কোটি ১৯ লাখ ও ৮ কোটি ১৭ লাখ। ২০১৩ সাল থেকে একই হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশেই স্থির রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (্এমএসভিএসবি-২) প্রকল্পের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দেয়া হয়। বুধবার আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আনুষ্ঠানিক-ভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক। বক্তব্য দেন তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সৌরন্দ্রেনাথ চক্রবর্তী, আইসিডিডিআরবি’র গবেষক আবদুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোঃ আমীর হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭০ থেকে ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের প্রাক্কলিত হিসাবে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হয়েছিল। বিবিএসের কাছে এই মুহূর্তে যে তথ্য আছে তা হিসাব করলে আমরা প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলিত হিসাবকে ছাড়িয়ে যাব। আর্থ-সামাজিক সূচকে উন্নতিকে ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন বলে মনে করেন মন্ত্রী। আর্থ-সামাজিক নির্ভরতার সূচক স্থিতিশীল ॥ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিবিএসের খানার গড় সদস্য সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ৪ দশমিক ৪ যা ২০১৭ সালে হয়েছে ৪ দশমিক ২। তবে দেশের নারীরা এখনও উচ্চমাত্রায় পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা ৮৫ দশমিক ৮ ভাগ পরিবারের খানা প্রধান হচ্ছে পুরুষ। বয়স্ক শিক্ষার হার বেড়েছে। গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর ॥ গড় আয়ুতে প্রতিবছর উন্নতি ঘটছে বাংলাদেশের। ২০১৭ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর। এর আগে ২০১৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৭১ দশমিক ৬ বছর। গড় আয়ুর হিসাবটি করা হয়েছে ভগ্নাংশ হিসেবে। অর্থাৎ মাস-দিনের হিসাবে একজন মানুষ ৭১ বছর ৭ মাস ৬ দিন বাঁচেন। এক বছরের ব্যবধানে গড় আয়ু বেড়েছে প্রায় ৫ মাস। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের গড় আয়ু বেশি বেড়েছে। পুরুষের বিয়ের গড় বয়স ২৫, নারীর ১৮ ॥ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে পুরুষদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স কিছুটা নিম্নমুখী। পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স বর্তমানে ২৫ দশমিক ১ বছর। এর আগের দুই বছর এটি ছিল যথাক্রমে ২৫ দশমিক ২ এবং ২৫ দশমিক ৩ বছর। বিপরীতে নারীদের এই বয়স ২০১৩ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৪ বছর, যা ২০১৭ সালেও একই আছে। বাড়ছে বিয়ে ও তালাকের প্রবণতা ॥ প্রতিবেদন মতে দেশে একইসঙ্গে বিবাহিত ও তালাকপ্রাপ্ত পুরুষ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের মোট বিবাহযোগ্য পুরুষ জনসংখ্যার ৫৯ দশমিক ৯ শতাংশ ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ। ১০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষের বিয়ের হিসাব কষে এ হার বের করা হয়েছে। পূর্ণবয়স্কদের মরণশীলতা ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ॥ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় মরণশীলতা ৫ দশমিক ১ জন, যা পল্লী এলাকায় ৫ দশমিক ৭ জন এবং শহর এলাকায় ৪ দশমিক ২ জন। ২০১৩ সালে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩। অর্থাৎ এ সময়ে মরণশীলতা কমেছে। এ সময়ে শিশু মৃত্যুর হারও কমেছে। ২০১৩ সালে প্রতি হাজার জীবিত জন্মের ক্ষেত্রে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৩১ এবং ২০১৭ সালে কমে হয়েছে ২৪। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়েনি ॥ গত ৫ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়েনি, প্রায় একই রকম রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে দেখা যায় যে, প্রত্যাশা অনুযায়ী শহর অঞ্চলের মহিলারা (৬৬ দশমিক ৩ শতাংশ) গ্রামঞ্চলের মহিলাদের চেয়ে (৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ) বেশি হারে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। প্রতি হাজারে প্রতিবন্ধী ৯ জন ॥ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রতি হাজারে ৯ জন কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। মহিলাদের (৮ দশমিক ৩ জন) চেয়ে পুরুষদের (৯ দশমিক ৮ জন) প্রতিবন্ধিতার হার বেশি। প্রতিবেদন মতে, মহিলাদের তুলনায় পুরুষের প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি বেশি।
×