ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরের পর এবার নির্বাচনী উন্মাদনা তিন সিটিতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ জুন ২০১৮

 গাজীপুরের পর এবার নির্বাচনী উন্মাদনা তিন সিটিতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুরের পর এবার বাকি তিন সিটি কর্পোরেশন রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে শুরু হচ্ছে নির্বাচনী উন্মাদনা। আগামী ৩০ জুলাই এই তিন সিটিতে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। মেয়র পদে ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে আগামী ১-২ জুলাই তারিখে। ৯ জুলাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ১০ তারিখ থেকে প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নেমে পড়বেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য শেষ অগ্নিপরীক্ষা। এর পরেই তারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে। ইসি সচিব সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল আগামী অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ঘোষণা করা হতে পারে। গত শনিবার টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভার নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে উল্লেখ করেন। এর আগে গত ৩০ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামও অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন। ইসির কর্মকর্তারা জানান সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পাশাপাশি ইসিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি কাজ চলছে। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরেই পুরোদমে জাতীয় নির্বাচনের দিকে নজর দেবে ইসি। গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বর্তমান ইসির অধীনে অনেকগুলো নির্বাচন পরিচালনা করা হলেও চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ছিল বড় নির্বাচন। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মূলত এই ইসির অগ্নিপরীক্ষা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া কুমিল্লা, রংপুর, খুলনা ও সর্বশেষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেকটাই আস্থার পরিচয় দিয়েছে তারা। কোন রকম বিতর্ক ছাড়াই এই চার সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় এবং রংপুরে সরকার দলীয় প্রার্থীর পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। অপরদিকে খুলনা এবং গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করায় নির্বাচন নিয়ে অন্য মহল থেকে বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে খুলনা এবং গাজীপুরের নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলো এসব নির্বাচনে কিছু অনিয়মের কথা বললেও বড় ধরনের অনিয়মের কোন অভিযোগ তারা করেনি। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের মন্তব্য ছিল কিছু অনিয়ম পাওয়া গেলেও তা ফল পরিবর্তনে কোন ভূমিকা রাখেনি। এছাড়া এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন চার সিটিতে বর্তমান কমিশন অনেকটাই আস্থার পরিচয় দিয়েছে। বাকি তিন সিটিতে তাদের শেষ অগ্নিপরীক্ষা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই জাতীয় নির্বাচনের তাদের ওপর আস্থা আরও বেড়ে যাবে। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। ৪২৫ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৯ কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগ পাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে কমিশন। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল যেমন ব্যাপক, ভোটও হয়েছে উৎসবমুখর। নির্বাচনী ফলে বিএনপি প্রার্থীকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে পরাজিত করেছে সরকার দলীয় প্রার্থী। বন্ধ হয়ে যাওয়া ৯ কেন্দ্রের ফল বাদ দিলে বাকি ৪১৬ কেন্দের ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম ভোট পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ ভোট। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী ভোট পেয়েছেন মাত্র ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তবে দলটির পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তার কোন সত্যতা ইসির পক্ষ থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রতিষ্ঠাটির কর্মকর্তারা। ভোট শেষে নির্বাচন নিয়ে ইসির পক্ষ থেকে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করা হয়েছে। ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটগ্রহণ উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে। গাজীপুর ভোট শেষে এখন তাদের শেষ অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে আগামী ৩০ জুলাই। এদিন রাজশাহী বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আজকের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। আগামী ১০ জুলাই থেকে তারা নির্বাচনে মাঠে নেমে পড়বেন। অন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো এই তিন সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপির প্রার্থীর। উভয় দলই এই নির্বাচনে জয় পরাজয়ের হিসাব কষছেন। অপর দিকে নির্বাচন কমিশন হিসাব কষছেন নির্বাচন সুষ্ঠু করার।
×