ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় কাল বটতলার ‘খনা’

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৮ জুন ২০১৮

শিল্পকলায় কাল বটতলার ‘খনা’

স্টাফ রপোর্টার ॥ দেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন বটতলার জনপ্রিয় প্রযোজনা ‘খনা’ নাটকটি আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হবে। ‘খনা’ নাটকটি রচনা করেছেন অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন মো. আলী হায়দার, মিজানুর রহমান, কাজী রোকসানা রুমা, সামিনা লুৎফা নিত্রা, তৌফিক হাসান, ইমরান খান মুন্না, শারমিন ইতি, খালিদ হাসান, আবদুস সালাম, আবদুল কাদের, ব্রাত্য আমীন, জিয়াউল আবেদীন রাখাল, বাকিরুল ইসলাম, ইভান রিয়াজ, সেউতি শাহগুফতা, পঙ্কজ মজুমদার, লায়েকা, কনা, দোলা, তাহিম, অনিন্দিতা, জগ প্রমুখ। নাটকটির মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন আবু আউদ আশরাফী। কোরিওগ্রাফি করেছেন মোহামদ রাফি ও নাসির উদ্দিন নাদিম। নাটকে ব্যবহৃত সুর ও সঙ্গীতে লায়কা বশীর, সৌম্য সরকার, শারমিন ইতি, হুমায়ূন রেওয়াজ, শেউতি শাহগুফতা, বাকিরুল ইসলাম। পোশাক পরিকল্পনায় তাহমিনা সুলতানা মৌ ও তৌফিক হাসান ভূঁইয়া।প্রপস্ হুমায়রা আখতার। পোষ্টার তৌহিন হাসান। বটতলার প্রথম দিককার প্রযোজনা ‘খনা’ নাটকটির ইতোমধ্যে দেশ এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চস্থ হয়েছে। সময়ের নাটকগুলোর মধ্যে দর্শকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করা এ প্রযোজনাটির নাট্য আঙ্গিক ও এর পা-ুলিপির যূথবদ্ধতা বার বার আলোচনায় এসেছে। নাটকের গল্প আবর্তিত হয়েছে কিংবদন্তি খনার আশ্রয়কে কেন্দ্র করে। এছাড়া ‘খনা’ নামটি নিয়ে আছে নানা কিংবদন্তি। জানা যায় খনা ছিলেন সিংহল রাজার কন্যা। এক শুভক্ষণে তার জন্ম বলে নাম দেয়া হয় ক্ষণা। আর ‘ক্ষণা‘ থেকেই ‘খনা’ নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। খ্রিস্টীয় ৫০০ অব্দে প্রাচীন ভারতবর্ষের অবন্তী রাজ্যের রাজা ছিলেন বিক্রমাদিত্য। তার রাজপ্রাসাদের প্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ ছিলেন বরাহ মিহির। বরাহের ঘরে পুত্রসন্তান জন্ম নিলে নাম রাখেন মিহির। শিশুটির কষ্ঠি বিচার করে তিনি দেখলেন, শিশুটির পরমায়ু মাত্র এক বছর। তাই বরাহ একটি পাত্রে মিহিরকে রেখে সমুদ্রজলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে এসে উপস্থিত হয় সিংহল দ্বীপের উপকূলে। পরে রাজা তাকে তুলে নিয়ে লালন-পালন করেন এবং খনার সঙ্গে বিয়ে দেন। দু’জনই জ্যোতিসশাস্ত্রে পারদর্শিতা লাভ করে। মিহির খনাকে নিয়ে নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। পিতার মতো মিহিরও বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় প্রতিপত্তি লাভ করেন। একদিন রাজা আকাশে নক্ষত্রের সংখ্যা কত জানতে চাইলে পিতাপুত্র তা নির্ধারণে অক্ষম হয়ে খনার সাহায্যে কৃতকার্য হন। এতে সম্মানহানির ভয়ে মিহির খনার জিহ্বা কেটে ফেলেন। এর কিছুদিন পরই খনার মৃত্যু হয়। কিন্তু এই কিংবদন্তি কাহিনী সত্য কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, বিক্রমাদিত্যের শাসনামলে বরাহমিহির একজনই ছিলেন। তবে খনার বচনগুলোর অধিকাংশ লিখিত হয়েছে বাংলায়। বচনগুলোর ভাষা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন, এগুলোর রচনাকাল ৪০০ বছর আগের নয়। কিন্তু বরাহমিহিরের আবির্ভাবকাল প্রায় দেড় হাজার বছর আগে! বরাহমিহিরের জাতক প্রভৃতি জ্যোতিষ গ্রন্থের সঙ্গে খনার বচনের কতগুলো অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়। কৃষিসংক্রান্ত নানা বিষয় সম্পর্কে খনার বচনগুলো অমূল্য সম্পদ এবং কৃষিজীবীদের কাছে খুবই আদরণীয়। ‘খনা’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র লীলাবতী, যিনি পরে খ্যাতিলাভ করেন ‘খনা’ নামে। জ্যোতিষী লীলাবতীর স্বামী মিহিরও একজন জ্যোতিষী। খনার শ্বশুর বরাহ মিহিরও খ্যাতিমান জ্যোতিষী। তিনি পুত্রবধূর খ্যাতিতে ঈর্ষা করেন। লীলাবতীকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার ব্যর্থ প্রয়াসের পর একদিন তার জিহ্বা কর্তনের নির্দেশ দেন বরাহ। তারপরও থেমে থাকে না সে। সত্যানুসন্ধানে সে মৃত্যুর মুখোমুখি হতেও ভয় পায় না। এভাবেই এগিয়ে যায় ‘খনা’ নাটকের গল্প। তবে বলা যায় বিদুষী ‘খনা’ তথা লীলাবতীর গল্পটা অনেক পুরোনো, কিংবদন্তীর ঘেরাটোপে বন্দী। পুত্রজায়ার যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাব দর্শনে বরাহের হীনমন্যতা ও ঈর্ষা। শ্বশুরের নির্দেশে লীলাবতীর জিহ্বা কর্তন ও তার ‘খনা’ হয়ে ওঠার গল্প পেরিয়েছে প্রজন্মের সীমানা। খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছরের আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধ মাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? নাকি এ সত্য-তথ্য সবই এ ভূ-খন্ডের বৃষ্টি, পলি, আর জল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্ঠিক জ্ঞানের সংকলন? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তার পরিণতি নির্মম, নাকি তিনি নারী হয়ে মিশেছিলেন চাষাভুষোর সনে; সেই তার কাল? পুরুষতন্ত্র না শ্রেণী কাঠামো; নাকি উভয় দাঁড়ায় লীলাবতীর বিপ্রতীপে? মিহির বা প্রাকৃত লোকালয় কারোর পরোয়া না করা জীবন ত্যাগী নেশার ঘোর তাকে নিয়ে যায় দিগন্তের ওপার। খনার সত্য শুধু থেকে যায় কৃষকের মুখে। তবু প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য? নাকি আজকে নির্ভুল যা কাল তা হতে পারে অসত্য? শৃুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা তাঁর সে নেশা কি এক রোখা জেদ? খনা নিজেই নিজেকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেন।
×