ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৮ জুন ২০১৮

কক্সবাজারে বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে তিনটি প্যাকেজের আওতায় চকরিয়া পশ্চিম বড়ভেওলা ও বদরখালী ইউনিয়নের অংশে ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী যথাসময়ে কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা কাজটি বুঝে নিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। ঘাপলা ধরা পড়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজ সমাপ্ত করতে আরও অতিরিক্ত ১০ মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছে। তবে কাজের বিপরীতে বিল বাবদ ইতোমধ্যে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দে তিনটি প্যাকেজের আওতায় চকরিয়া উপকূলীয় জনপদ পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের চোয়ারফাঁড়ি থেকে বদরখালীর টুটিয়াখালী পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণে কাজটি পেয়েছেন চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুছ এ্যান্ড ব্রাদার্স। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ জুন কাজটি সমাপ্ত করার কথা। কার্যাদেশের শর্তাবলি অনুযায়ী তিনটি প্যাকেজের আওতায় ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাঁধের উপরিভাগে (টপ) ১৩ ঘনফুট, সাইডে (স্লো) ওয়ান পয়েন্ট টু এবং ওয়ান পয়েন্ট থ্রি হিসেবে মাটি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা বেড়িবাঁধ নির্মাণে কার্যাদেশের শর্তাবলি লঙ্ঘন করে কোন কোন স্থানে ঠিকমত মাটি দিলেও বেশির ভাগ স্থানে মাটির প্রলেপ লাগিয়ে কাজটি সমাপ্ত করেছে। ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে মাটি নিচে পড়ে যাচ্ছে এবং বাঁধের গোড়া থেকে মাটি নিয়ে তা বাঁধ দেয়ায় সরকারের এ বিপুল টাকা হরিলুটের পাশাপাশি অধিবাসীদের দুঃখ জায়গাতেই থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পশ্চিম বড়ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা পড়েছে আমার ইউনিয়নে। কাজের শুরুতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছতা দেখালেও পরে বেশিরভাগ স্থানে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি নিয়ে বাঁধে দেয়ায় অধিকাংশ এলাকা ভেঙ্গে মাটি ফের নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। নির্মাণ কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি দাবি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুছ এ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিনিধি নুরে বাশার সয়লাভ বলেন, কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর আমরা যথাসময়ে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করি। তবে অব্যাহত ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। কাজটি সমাপ্ত করতে আগামী বছরের (২০১৯) সালের মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেছি। তিনি বলেন, বাইরে থেকে মাটি সংগ্রহের কোন সুযোগ না থাকায় কিছু স্থানে বেড়িবাঁধের গোড়া থেকে মাটি নিয়ে তা বাঁধের নির্মাণ কাজে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষে বেড়িবাঁধটি চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বুঝে দেয়ার কথা ছিল। এখনও ২০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। তাছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি সম্পন্ন করতে সময়ের আবেদন করেছে। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার মাধ্যমে শতভাগ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে ঠিকাদারকে বিলের টাকা ছাড় দেয়া হবে।
×