অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিনিয়োগের সুদ হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে স্বল্প সুদে সরকারী আমানতের নিশ্চয়তা চান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীরা। কিন্তু ব্যাংক মালিকরা সিদ্ধান্ত দিলেও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীদের নতুন এ আবদারের কারণে বিনিয়োগের সুদহার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিষয়টি এমডিদের টালবাহানা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, খোদ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে তারা নানা শর্ত দিচ্ছেন। অথচ ব্যাংকগুলোর জন্য বেশ কিছু সুবিধা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। কমানো হয়েছে কর্পোরেট করের হার। সরকারী আমানত রাখার বিষয়টি দাবি অনুযায়ী অর্ধেকে উন্নীত করার পর তারা এখন নামমাত্র সুদে ওইসব তহবিল রাখতে চাচ্ছেন।
জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতের তারল্য সঙ্কট (নগদ টাকার সঙ্কট) উত্তরণ করে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে চার ধরনের সুবিধা নিয়েছেন বেসরকারী ব্যাংকের মালিকরা। ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির চাহিদা অনুযায়ী যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো সরকারী আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে রাখা, সিআরআর এক শতাংশ কমানো, ঋণ আমানতের হার (এডিআর) সমন্বয়সীমার সময় বাড়ানো এবং রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এ সব সুবিধা দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী পৃথক দুই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আপনাদের অনেক সুবিধা দিয়েছি, এবার ব্যাংক ঋণের সুদহার কমান। তখন ব্যাংক মালিকরা কথাও দিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১ জুলাই থেকে ৯ শতাংশের বেশি সুদ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারী ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি)। এরপর গত সোমবার বেসরকারী খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, স্বল্প সুদে সরকারী আমানত দিলেই তারা বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন। এ পরিস্থিতিতে বিব্রতবোধ করছেন ব্যাংকের মালিকপক্ষ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সরকার বিরোধী এবং বিএনপি জামায়াতের মদদপুষ্ট কিছু এমডির যোগসাজশে এ ধরনের বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এমডিদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ব্যানারে এই বৈঠক আয়োজন নিয়ে খোদ ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরেও নানা কথাবার্তা হচ্ছে। সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকারকে বিব্রত করতেই তারা এমনটি করছেন বলে সূত্রগুলো অভিমত পোষণ করে। সূত্রমতে, ওই বৈঠকে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তাবটি সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। এবিবির চেয়ারম্যান ও বেসরকারী ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পর্ষদ তাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমাদের অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের তারল্য যোগান দিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে তারল্য রয়েছে। এ সব তারল্যের অংশ আমাদের বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে আসতে হবে। আর সেটি ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে। এর বেশি সুদ যাতে সরকারী ব্যাংক ও সরকারী প্রতিষ্ঠান তহবিল যোগানে না চায় সেটি সরকারীভাবে জানিয়ে দিতে হবে। এদিকে বৈঠকের সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এক অঙ্কে ঋণের সুদ নামিয়ে আনার ঘোষণা বাস্তবায়নে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে। এজন্য কিছুটা ছাড় দিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনোভাব ও অর্থনীতির স্বার্থে দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।
এবিবির প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও খুব বেশি আইনী ব্যত্যয় বরদাস্ত করা হবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলো বাস্তবায়ন করছে কিনা সেটি নজরদারি করবে। প্রয়োজনে তাদের কাছে বিতরণ করা ঋণের হালনাগাদ তথ্য চাওয়া হবে।