ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট চুক্তি বাস্তবায়নে তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৮ জুন ২০১৮

সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট চুক্তি বাস্তবায়নে তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পোশাক খাতে টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট চুক্তি বাস্তবায়নে তাগিদ দেয়া হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী খাতের বিভিন্ন পদক্ষেপে সন্তুষ্ট ক্রেতাগোষ্ঠী। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পোশাকের দাম বাড়ানো এবং এ খাতের সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ক্রেতা গোষ্ঠী বলছে, শ্রম অধিকার রক্ষা এবং কারখানার নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সাসটেইনেবিলিটি চুক্তি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, পোশাক খাতের শ্রম অধিকার রক্ষা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে সই করা চুক্তি সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট বাংলাদেশ কতটা বাস্তবায়ন করেছে, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এবার দুদিনব্যাপী চতুর্থ পর্যালোচনা বৈঠক শুরু করা হয়েছে। ওই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বিশ্ব শ্রম সংস্থা (আইএলও), বাংলাদেশ, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, ক্রেতা প্রতিনিধি ও ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে, তখন ওই বছরের ৮ জুলাই ইইউ সেই সুবিধা বহাল রেখে পোশাক খাতের শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে বেশকিছু শর্তসহ একটি চুক্তি করে বাংলাদেশের সঙ্গে। ওই চুক্তিটিই ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট’ নামে পরিচিত। জানা গেছে, পর্যালোচনা সভায় শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ প্রদান এবং এক্ষেত্রে শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পোশাকখাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট বাস্তবায়নে এ মুহূর্তে পোশাকের দাম বাড়ানো উচিত। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে পোশাকের দাম নির্ধারণ করা হলে ক্রেতাদের সব শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে। আর শ্রমিক নেতারা বলছেন, পোশাক খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা ট্রেড ইউনিয়ন ও মজুরি। এটি করতে গেলে মালিকদের হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। এ দুটো সমস্যার সহজে সমাধান হয় মজুরি সঠিক সময়ে প্রদানের মাধ্যমে। এজন্য পোশাকের সঠিক মূল্য নির্ধারণের সময় এসেছে। রানা প্লাজার মতো বড় এই দুর্ঘটনার পর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল পোশাক শিল্পখাত। সেই সময় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাস্টেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট গঠন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রেতাজোটের পরামর্শে বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লান-২০১৩, সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট এবং জাতীয় ত্রি-পক্ষীয় কর্ম-পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। বলা হয়েছিল-এই তিনটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার পাবে। একই সঙ্গে শ্রমিক যে কারখানায় কাজ করেন তা হবে শতভাগ নিরাপদ কর্ম পরিবেশ। জিএসপি পুনর্বহাল এবং পোশাকখাতের শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লান নামে একটি পরিকল্পনা দেয়া হয়। এই মূল্যায়ন সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-ক্রেতাদেশগুলোর সব শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে পোশাকখাত। জিএসপি পুনর্বহাল না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি বেড়েছে। কেটে যাচ্ছে ইমেজ সঙ্কট। ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট এ্যাকোর্ড এবং এ্যালায়েন্স কয়েকটি বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে পোশাক খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে আরও মনিটরিং প্রয়োজন বলেও বলে মনে করছে ক্রেতাজোট। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফোরামে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন শতভাগ কারখানা কমপ্লায়েন্স। শুধু তাই নয়, গ্রীন গার্মেন্টসে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বমানের পোশাক কারখানা বাংলাদেশে গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্রেতাদের শর্ত মোতাবেক বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শ্রম আইন এবং ইপিজেড শ্রমিক আইন একইভাবে সংশোধন করেছে। একটি কারখানার ৩০ ভাগ শ্রমিকের পরিবর্তে ২০ ভাগ শ্রমিক চাইলেই এখন শ্রমিক সংগঠন তৈরি করতে পারবে। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর ত্রুটির পরিমাণ দুই শতাংশের কম, যেখানে ২ শতাংশের বেশি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। এদিকে, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় উদ্যোগের আওতায় এ্যাসেসমেন্টকৃত গার্মেন্টস কারখানার সংস্কার কার্যক্রম আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। যেসব কারখানা এতে ব্যর্থ হবে সেগুলো আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে। জানা গেছে, জাতীয় উদ্যোগের আওতায় দেশে পোশাক কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৯টি। এর মধ্যে বর্তমানে ৭৫৫টি কারখানা এ উদ্যোগের আওতায় সক্রিয় রয়েছে। এ কারখানাগুলোর ৩২ শতাংশেরও কম সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে ১৬৫টি কারখানা সংস্কার শুরু করেনি এবং ৭৫৩টি রয়েছে বন্ধ। শত ভাগ সংস্কার সম্পন্ন করেছে মাত্র ৭টি কারখানা।
×