ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৮ জুন ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ঈদের পর দেশের হাইওয়েগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ হতাহতের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এক অনির্ধারিত আলোচনায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে কয়েক দফা নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, দূরপাল্লার যানবাহনে একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি কোন ড্রাইভারকে চালকের আসনে রাখা যাবে না। বিকল্প চালক রাখতে হবে। এর পাশাপাশি হাইওয়ের পাশে বিশ্রামাগার তৈরি, কঠোরভাবে সিগন্যাল মেনে চলা, অনিয়মতান্ত্রিক রাস্তাঘাট পারাপার বন্ধ, সিট বেল্ট বাঁধা এবং চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। প্রধানমন্ত্রী শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি। এসব নির্দেশ যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিয়মিত দেখভালের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন তিন মন্ত্রীকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন মন্ত্রী হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌপরিবহনমন্ত্রী। সর্বোপরি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ সংক্রান্ত আইন যাতে দ্রুত পাস হতে পারে, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি। ্উল্লেখ্য, আইনটি বর্তমানে যাচাই বাছাইয়ের জন্য আছে আইন মন্ত্রণালয়ে। সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১২ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ৫২ হাজার। এতে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫৮ হাজার, আহত হয়েছেন লক্ষাধিক। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত সাতটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হচ্ছেÑ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ওভারলোডিং-ওভারটেকিং, চালকদের বিরামহীন গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অনুসরণ না করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অযান্ত্রিক- অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল, সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ ও বাঁকবহুল সড়ক যোগাযোগ। অবশ্য আশার কথাও শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বছর ওয়ারিভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার হার কমে আসছে। মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীত হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো নিয়ন্ত্রণ, মাদকাসক্ত চালক নিয়োগ বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিল, মোবাইলকোর্টের কার্যক্রম বৃদ্ধি, জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি হাইওয়ে পেট্রোল পুলিশের নিয়মিত নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশও রয়েছে। জেল-জরিমানার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রথম সড়ক পরিবহন আইনে যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান রাখা হয়েছে ন্যূনতম ৮ম শ্রেণী এবং সহকারীর যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী পাস। পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে বয়সও বেঁধে দেয়া হয়েছে, ২১ বছর। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রণীত এই আইনে তিন রকম শাস্তি দেয়া যাবে দ-বিধির অধীনে। নরহত্যা (উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে) হলে ৩০২ ধারা প্রযোজ্য হবে। যাতে শাস্তি মৃত্যুদ-। আর খুন নয় এমন ঘটনায় ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সাজা দেয়া যাবে যাবজ্জীবন। আর শুধু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য হলো ৩০৪ (খ) এর জন্য তিন বছরের কারাদ-। তবে এর ফলে শেষ পর্যন্ত যানবাহন মালিক ও চালকদের স্বার্থই সংরক্ষিত হয়েছে। দেশের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে যাত্রী কল্যাণে নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ সুশীল সমাজের দাবি ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। সে ক্ষেত্রে তা যাবজ্জীবন না হোক, অন্তত ১৪, ১০ অথবা নিদেনপক্ষে ৭ বছরের জেল-জরিমানাসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা ছিল বাঞ্ছনীয়। তদুপরি বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার অপরাধ হবে জামিন ও আপোসযোগ্য। গণদাবিকে উপেক্ষা করে পরিবহন মালিক ও চালক-হেলপারদের চাপে পড়ে পিছু হঠা ঠিক হবে না সরকারের।
×