ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মৃত্যু ভূমধ্যসাগরে

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৭ জুন ২০১৮

এবার মৃত্যু ভূমধ্যসাগরে

আবরও অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশীদের মৃত্যু! সাগরপথে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে প্রবেশের সময় নৌকাডুবিতে বাংলাদেশীদের মৃত্যু এখন যেন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই অভিবাসন প্রত্যাশীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অভিবাসনের জন্য তারা বেছে নিতে শুরু করেছেন বিপদসঙঙ্কুল যাত্রা। বিশ্বের অভিবাসন প্রত্যাশীদের মিছিলে বাংলাদেশীদের সংখ্যা বর্তমানে অবশ্য অনেকটা কমে এসেছে। বাংলাদেশ থেকে নৌপথে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় অবৈধ অভিবাসনকালে বহু মানুষের মরণাপন্ন বিপদের কথা বিশ্ববাসী জেনেছিল দেড়-দু’বছর আড়ে। পৃথিবী নামক গ্রহে মূলত ক্ষুণিœবৃত্তির জন্যই নানা জাতি নানা দেশের মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে অচেনা লোকালয়ে। নিজ দেশে থেকে ভিনদেশে অভিবাসন এবং ভিন্ন একটি দেশ থেকে অপর কোন দেশে অভিবাসনের ভেতর কিছুটা পার্থক্য রয়েছে বটে। স্বদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পেরে কিংবা উন্নততর কর্মসন্ধানে মানুষ বিদেশে যায়। কিন্তু লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য অভিবাসীদের ইউরোপযাত্রার তাগিদের পেছনে রুটি-রুজি ছাড়াও ভিন্ন কারণ বিদ্যমান ছিল। লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং অন্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে পড়ে বাংলাদেশসহ সিরিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের নাগরিক ইউরোপে অভিবাসনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা গেছে। গত বছর থেকেই নৌকায় চেপে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়া শরণার্থীদের একক দেশ হিসেবে সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাককে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে অবস্থান করছে। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক বিশেষ প্রতিবেদনে বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরেছিল। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমায় এই শরণার্থীরা। এরপর ইতালিতে পৌঁছতে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ভাসায় তারা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) সূত্রমতে ২০১৬ সালের মার্চ নাগাদ তিন মাসে ইতালিতে ঢোকা বাংলাদেশীর সংখ্যা ছিল একজন। পরের বছর একই সময়ে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৮৩১ জনে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন শরণার্থীদের ঢল সামলাতে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তির পর আজিয়ান সাগরের রুটটি দিয়ে অনুপ্রবেশ কমে যায়। কিন্তু ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালিতে পাড়ি জমানো বেড়ে যায়। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে ঢোকার অবৈধ পথটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে নৌকাডুবিসহ নানা কারণে এ বছর সহ¯্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিপজ্জনক ও অবৈধ অভিবাসন বন্ধের ব্যাপারে কী করণীয় সেটি নিয়ে সুগভীর আলোচনা হওয়া দরকার। এটি খুবই স্বাভাবিক যে, কমংসংস্থানের সুযোগ বাড়লে মানুষ স্বদেশেই আয় রোজগারের চেষ্টা করবে। দেশে এখন বিদেশী বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে। বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম বাড়ছে। জনসংখ্যা অবশ্য বেড়েই চলেছে। এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে না পারলে অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা যে বাড়তেই থাকবেÑ তা সাধারণভাবে অনুমান করা যায়। বিদেশে শ্রমবাজার প্রসারের লক্ষ্যেও সচেষ্ট হতে হবে। বৈধপথে বিদেশে গিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে দেশ ত্যাগ করবে না, সেকথা বলাই বাহুল্য। সেজন্যে উদ্যোগী হতে হবে। সেইসঙ্গে মানুষকে সচেতন করার উদ্যাগও নেয়া চাই। সাগরপথে যে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে এবং প্রায়শই এই অবৈধ অভিবাসন রুটে মানুষের মৃত্যুও ঘটনা ঘটেছে- বিষয়টি বেশি করে প্রচার হওয়া দরকার। মনে রাখা চাই জীবন সব কিছুর ওপরে। জীবনের বিনিময়ে কর্মসংস্থানের জন্যে মরিয়া হওয়া কখনোই শুভ ফল বয়ে আনবে না।
×