ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বাজেট আলোচনা

হাসিনা সরকারকে ফের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে হবে

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৬ জুন ২০১৮

হাসিনা সরকারকে ফের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, উন্নয়নের প্রয়োজনে, বাংলাদেশের শান্তি সমৃদ্ধির প্রয়োজনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য জোটের ঐক্য, দলের ঐক্য, জনগণের ঐক্য দৃঢ় করতে হবে। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি পানি ঘোলা করতে চায়। জনগণের আস্থা হারিয়ে তারা বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। তারা মাদকবিরোধী অভিযানের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সাঁড়াশি অভিযান চালানোর দাবি জানান। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এইচ এন আশিকুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, সরকারী দলের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এম এ মালেক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ছানোয়ার হোসেন, হাবিবুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আবদুল ওয়াহহাব, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, ন্যাপের বেগম আমেনা আহমেদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন, বেগম নুর ই হাসনাত লিলি চৌধুরী প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, শেখ হাসিনার ওপর এদেশের মানুষের অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। উন্নয়নের প্রয়োজনে, বাংলাদেশের শান্তি সমৃদ্ধির প্রয়োজনেই তাকে ও তার সরকারকে ক্ষমতায় ফিরে আসতে হবে। এর জন্য জোটের ঐক্য, দলের ঐক্য, জনগণের ঐক্য দৃঢ় করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন যে, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে। তার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জোটবদ্ধ বিজয় এসেছে। এবারও আসবে। তার জন্য সম্মিলিত প্রয়াসের বিকল্প নেই। দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জঙ্গীরা একবার ক্ষমতার চাবিকাঠি হাতে পেলে সবকিছু থেমে যাবে, উল্টে যাবে। রক্তগঙ্গা বহাবে তারা। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। গর্জন করবে, বর্ষাতে পারবে না। কেবল এতিমের টাকা নয়, অন্য অপরাধের কারণেও বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন দূরে থাক, বিএনপির আহ্বানে কোন আন্দোলনেই জনগণ মাঠে নামবে না। তা’বলে আমাদের নিজের অন্যায়গুলোর বিষয়ে আমরা যেন চোখ বুঁজে না থাকি। অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ আমলা, অসৎ রাজনীতিবিদদের চক্র সব জায়গায় তৎপর। উন্নয়ন যেমন জনগণকে আস্থাশীল করে, তেমনি এ ধরনের আচরণ মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়। চলমান মাদকবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, জঙ্গীবাদের পর মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। বন্দুকযুদ্ধ এর সমাধান নয়। প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধের। প্রয়োজন গডফাদারদের বিচারের আওতায় এনে তাদের মৃত্যুদ- দেয়া। তাদের সম্পদ বাজেয়াফত করা। দেশের তারুণ্যকে রক্ষা করতে মাদক নির্মূল করতেই হবে। নির্মূল করতে হবে দুর্নীতি। চুনোপুঁটিতে থামালে চলবে না, রাঘব বোয়ালদের জালে আটকাতে হবে। তাদের সম্পদ বাজেয়াফত করতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযানের পর এবার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নির্দেশ দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে ধ্বংস করতে চায়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দ্রুত এমপিভুক্ত বৃদ্ধি এবং গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানান। সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি পানি ঘোলা করতে চায়। জনগণের আস্থা হারিয়ে তারা বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। তাই বিএনপিকে আহ্বান জানাই, নির্বাচনে আসুন, নির্বাচন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। হাওয়া ভবনের পরিকল্পনায় আর আপনারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারবেন না। সাহারা খাতুন বলেন, শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাসী, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারী, ধ্বংসাত্মককারীদের ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দাঁড়াতে হবে। নৌকাকে পুনরায় বিজয়ী করে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। হাছান মাহমুদ বলেন, গত সাড়ে ৯ বছরে গণমুখী ও উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে বাংলাদেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সারাবিশ্বই বিস্ময়ের সঙ্গে তা স্বীকার করছে। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্বের অনেক দেশই তা অনুসরণ করছে, পরামর্শ নিচ্ছে। জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া কেন, অনেক উন্নত রাষ্ট্রকেও হার মানাবে। জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন বলেন, ব্যাংকিংখাত এবং পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি লুট হলেও কারোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বেকারত্ব এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি চাকরির জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়, এটি ওপেনসিক্রেট। এসব বন্ধে কোন দিকনির্দেশনা নেই। ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মা বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে আবারও অস্থিতিশীল ও আগামী নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তিদের মোকাবেলা করতে হবে। ন্যাপের আমেনা আহমেদ বলেন, ঋণ খেলাপী সংস্কৃতি অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। বিদেশে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক হারে যুব সমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা না গেলে বাজেটের কাক্সিক্ষত উদ্দেশে পূরণ হবে না।
×