খাবার বা কোন কিছু গিলতে সুবিধা বোধ করাকে ডিসপেজিয়া বলে।
কারণ : ১. খাদ্যনালীর গঠনগত কারণসমূহ
২. স্নায়ু বা পেশীজনিত কারণসমূহ
ক. খাদ্যনালীর গঠনগত কারণসমূহ : এসব কারণকে চার ভাগে ভাগ করা যায় :
১. মুখগহ্বরজনিত (জিহ্বার সমস্যাসমূহ)
২. ল্যারিঙ্কস (শ্বাসনালী) ও ফ্যারিংস (গলঃবিল) বিভিন্ন সমস্যা
৩. অন্ননালীজনিত কারণ
৪. গলঃদেশের বিভিন্ন কারণ
১. মুখগহ্বরজনিত কারণ-
ক্স চোয়াল আটকে গেলে
ক্স মুখের প্রদাহ, টনসিলের ইনফেকশন, ঠোঁটের কোনায় আলসার
ক্স জিহ্বায় ঘা, জিহ্বায় ক্যান্সার
ক্স আক্কেল দাঁত ও অন্যান্য দাঁতের সমস্যা
ক্স মুখগহ্বরের ভেতরে প্রদাহ
ক্স মুখগহ্বর, মুখের তালুর টিউমার
২. শ্বাসনালী ও গলঃবিলের কারণÑ
ক্স টনসিলের প্রদাহ
ক্স টনসিলের চারপাশে পুঁজ হওয়া
ক্স গলঃবিলের পেছনে ও চারপাশে পুঁজ হওয়া
ক্স ফ্যারিংসের ক্যান্সার (টনসিল ও জিহ্বার গোড়াসহ)
ক্স শ্বাসনালীতে পানি জমা
ক্স ল্যারিংস এ ক্যান্সার
ক্স ফ্যারিংসে অনাকাঙ্কিত বস্তু আটকে যাওয়া যেমন : মাছের কাঁটা
ক্স অন্যান্য রোগ; যেমন : টিবি, ফাংগাল ইনফেকশন, সিফিলিস, এইডস্
ক্স মুখের তালু ও ফ্যারিংসের দুর্বলতা (অবশ্) হলে, নিউরোজেনিক
ক্স ভিনসেন্ট এনজিনা
৩. অন্ননালীজনিত কারণ-
(ক) নালীর ভেতর কারণ (ঈধঁংব রহ ঃযব ষঁসধহ) - অনাকাক্সিক্ষত বস্তু যেমন : পয়সা শিশুদের ক্ষেত্রে, মাংসের হাড় বা নকল দাঁত বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
(খ) নালীর দেয়ালজনিত কারণ-
ক্স জন্মগত সরু (ধঃৎবংরধ) ও অন্যান্য ক্রটিসমূহ
ক্স এসিডে পোড়াজনিত (করোসিভ) অন্ননালীর প্রদাহ
ক্স পেপটিক অন্ননালীর প্রদাহ
ক্স আঘাতজনিত অন্ননালীর প্রদাহ
ক্স নালী চিকন হওয়া
ক্স কার্ডিওস্পাজম
ক্স স্পাজম ও ডাইভারটিকুলাম
ক্স এডিনমা বা মায়োমা
ক্স অন্ননালীর ক্যান্সার
ক্স ট্রাকিও-ওসোপেজিয়াল ফিসটুলা (খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী যুক্ত হওয়া)
(গ) নালীর বহিঃপাশে কারণ-
ক্স রেট্রো স্টারনাল গয়টার থাইরয়েডজনিত ও থাইমাস বড় হলে- শিশুদের ক্ষেত্রে
ক্স হৃৎপি- অধিক বড় হওয়া
ক্স ফুসফুসের ভেতর ক্যান্সার
৪. গলঃদেশজনিত কারণ-
ক্স থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হওয়া এবং থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যান্সার
ক্স ল্যাডউইগ এনজইনা
ক্স টেমপোরা ম্যান্ডিবুলার বা চোয়ালের জয়েন্টের আর্থ্রাইটিস
ক্স প্যারোটিড গ্রন্থির প্রদাহ
৫. স্নায়ু পেশীজনিত কারণ-
ক্স ভেগাল নার্ভ প্যারালাইসিস
ক্স মোটর নিউরন ডিজিস
ক্স পেরিফেরাল নিউরাইটিস
ক্স জুগুলার-ফোরাসেন সিন্ড্রম
৬. অন্ননালীজনিত পাঁচটা প্রধান কারণ-
ক্স অন্ননালীর ক্যান্সার
ক্স অন্ননালী সরু হয়ে যাওয়া
ক্স একালাসিয়া কার্ডিয়া
ক্স অনাকাক্সিক্ষত বস্তু ঢুকলে
পরীক্ষা :
ক. ইতিহাস -
১. লক্ষণ :
ক্স খাবার ভেতরে ঢুকবে না
ক্স খাবার উপরে উঠে আসবে
ক্স গলায় কিছু আটকে আছে- এমন মনে হবে
২. সমস্যার স্থান : রোগী সমস্যা স্থান নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে। যেমন- এটা ক্ষতের স্থানের ওপর নির্ভর করে।
৩. লক্ষণসমূহ তীব্রতা : অল্প পরিমাণ পানি বা পানীয় রোগী গিলতে পারে। তরল, কঠিন বা উভয় জিনিসে অসুবিধা হয় এবং ওজন কমে যায়।
৪. লক্ষণের শুরু ও স্থায়ীকাল : হঠাৎ বা তীব্র হতে পারে, ধীরে ধীরে বাড়তে পারে, প্রথমে কঠিন খাবারে পরে তরল খাদ্যে সমস্যা দেখা দেয়।
৫. অন্যান্য লক্ষণসমূহ : ব্যথা, অল্প ওঠা, কাশি, গলার স্বর বদলে যাওয়া, দুশ্চিন্তা করা।
৬. বয়স : নবজাতক, শিশু, যুবক, বয়স্ক যে কোন বয়সে হতে পারে।
খ. পরীক্ষা :
ক্স মুখগহ্বর, জিহ্বা, নখ পরীক্ষা করে দেখতে হবে- মুখের কোনায় প্রদাহ, জিহ্বার প্রদাহ আছে কিনা দেখতে হবে।
ক্স গলা পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন গ্ল্যান্ড বা টিউমার আছে কিনা বা থাইরয়েড ফুলে গেছে কিনা।
রোগীকে পানি খেতে দিতে হবে এবং তার ঢোক কতটুকু গিলতে পারে তা খেয়াল করতে হবে।
ক্স গলঃবিল ও শ্বাসনালী পরীক্ষা করে ভোকাল কর্ড এ দুর্বলতা, জিহ্বার গোড়ায়, হাইপো-ফ্যারিংস এ কোন কিছু বড় হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।
ক্স এপিগ্যাস্ট্র্রিক টেনডারনেস বড় হয়েছে কিনা তা পেটে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ক্স রোগীর পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন আছে কিনা দেখতে হবে। রোগীর ওজন দেখতে হবে।
গ. ল্যাব পরীক্ষাসমূহ :
ক্স রক্ত- হিমোগ্লোবিন এবং রুটিন টেস্টসমূহ, সিরাম আয়রন, টোটাল আয়রন বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি, থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট, সিরাম ইলেক্ট্রলাইটিস।
ক্স খাদ্যনালীর বেরিয়াম এক্স-রে, ডিসপেজিয়া ও অন্ননালীর রোগ নির্ণয়ের জন্য এক আদর্শ পরীক্ষা।
ক্স এন্ডোসকপি বা রিজিড ইসোফেগোস্কপি করতে হবে। আরও অন্যান্য পরীক্ষা করতে হবে, যেমন : ফাইবার অপটিক ল্যারিংগোসকপি, বায়োপসি, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই।
চিকিৎসা : ডিসপেজিয়ার কারণ বা রোগ নির্ণয় করে, সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।
এ রোগের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাবতীয় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশে আছে।
লেখক : নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল,
রোড ৮, ধানম-ি, ঢাকা, ০১৯১৯ ২২২ ১৮২
ই-মেইল : [email protected]