ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুক টাইম লাইনে সামাজিক সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২৬ জুন ২০১৮

ফেসবুক টাইম লাইনে সামাজিক সচেতনতা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে কত মানুষ কতভাবে ব্যবহার করছে তার কোন হিসাব নেই। ফেসবুকের মাধ্যমে কেউ কেউ মানুষকে করছে অসচেতন; আবার কেউ কেউ তো রীতিমতো ফেসবুকে সমাজকে করছে অচেতন। তবে ভাইরালের এ যুগে ফেসবুকে নতুন এক সচেতনতার গল্প তৈরি করেছেন বরগুনার ছেলে সাঈদ রিমন। সমাজের নানা অসঙ্গতির চিত্র ফুটে উঠেছে তার স্থির চিত্রের মাধ্যমে। প্রাত্যহিক মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে স্থির চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তিনি। সাঈদ রিমনের এ ব্যতিক্রমী প্রচারণার গল্প জানাচ্ছেনÑ রিফাত কান্তি সেন কখনও ছিনতাইকারী, কখনও মাদকসেবী, কখনও কাঁচামাল বিক্রেতা, কখনও হকার, কখনও বাস দুর্ঘটনার শিকার, কখনও বস্তির খেটে খাওয়া মানুষটি, মলম পার্টির সদস্য, শুঁটকি বিক্রেতা, কখনও আবার টোকাই, জুতা পালিশওয়ালা, কখনও গাড়ির হেলপার, কখনও বা ক্ষুধার্ত কোন পাগল, কখনও ব্যস্ত রাস্তায় ফোনে কথা বলা কোন পথচারী, কখনও বা ক্লান্ত কোন শ্রমিক, কখনও বা রিক্সাওয়ালা এভাবেই সমাজের বাস্তব চিত্রগুলো দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের ফেসবুকের টাইম লাইন। নিজেই অভিনয় করে ছবি তুলেছেন, সে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে রীতিমতো কামিয়েছেন সুনাম। ছবিগুলো তুলেছেন তার সহকর্মীদের সহযোগিতায়। আমাদের বাস্তবিক জীবনে একজন শিক্ষিত বেকার যুবকের চাকরি না পাওয়া কত কষ্টের, সে চিত্র ফুটে উঠেছে তার স্থির চিত্রের মাধ্যমে। সাঈদ রিমনের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। সমাজের নানা অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরতে যেন বদ্ধপরিকর নতুন প্রজন্মের অহঙ্কার রিমন। অসহায় মানুষের কষ্টের জীবনও ফুটে ওঠেছে তাঁর স্থির চিত্রে। রেললাইনের পাশে, ওড়ায় করে শুয়ে থাকা সেই ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত শ্রমিকের গল্পটাও যেন ভেসে উঠেছে তাঁর এমন ব্যতিক্রম কর্মের মধ্য দিয়ে। মানুষকে সচেতন করতেই রিমনের এ উদ্যোগ। রিমন সমাজের বিবেকের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কী করে একজন লোক হাত পাতলে তাকে সম্মান জানাতে হয়। রিমন প্রতিটি ছবির বেশকিছু ব্যতিক্রম ক্যাপশন দিয়েছেন। ‘যে মুখে ডাকি মা, সে মুখে মাদককে না’ এমন স্লোাগানের উপর ভিত্তি করে বরগুনা জেলা পুলিশ ৫০ হাজার মাদকবিরোধী লিফলেট বিতরণ করেছে জনতার মাঝে। রিমনের ছবি দিয়ে তৈরি করেছে বিলবোর্ড। তার ছবি সম্বলিত লিফলেটগুলো পুলিশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। নাটোরে পুলিশ তো বিলবোর্ডে রিমনের সেসব ছবি টাঙিয়ে মাদকবিরোধী প্রচারনায় কাজে লাগাচ্ছে। রিমন রাজধানীর নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বস্ত্র প্রকৌশলে স্নাতক করেছেন। পেশায় তিনি একজন বস্ত্র প্রকৌশলী। গত পাঁচ বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যতিক্রম সব স্থিরচিত্র প্রকাশ করেন রিমন। তার এসব জনসচেতনতামূলক স্থির চিত্র দিয়ে বিলবোর্ড নির্মাণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর ও বরগুনা পুলিশ প্রশাসন। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে রিমনের এ উদ্যোগ সারাদেশে প্রশংসার দাবিদার। বিষয়টি নিয়ে রিমন বলেন, সমাজে অনেকেই আছেন নিজে অসচেতন। তারা নিজেদের দোষত্রুটিগুলো দেখতে পায় না। সব সময় অন্যের দোষ খোঁজে। সমাজে অসচেতন থাকার কারণেই আমরা দিনে দিনে নিত্যনতুন ঘটনার জন্ম দিচ্ছি। আমাদের অসচেতনতার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনার মতো ঘটনা। মাদকের ছোবলে নতুন প্রজন্ম হচ্ছে আক্রান্ত। সমাজের সচেতনতাই পারে সমাজ থেকে এগুলো দূর করতে। আর সেজন্যই আমার এমন ব্যতিক্রম প্রচারণা।
×