ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এন্থনি বয়লে- আদোয়া আবোআহ্

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২৬ জুন ২০১৮

এন্থনি বয়লে- আদোয়া আবোআহ্

এন্থনি বয়লে মঞ্চে এন্থনি বয়লেকে প্রথম দিন দেখেই তার মা বলেছিলেন, ‘তুমি একদিন অনেক বড় তারকা হবে।’ মায়ের সে আশাবাদ সত্য হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ওয়েস্ট বেলফেস্টে বেড়ে ওঠা বয়লে নিজেকে নিয়ে ভুগতেন অস্থিরতায়। তার অভিনব সব আইডিয়া আর অসাধারণ প্রানশক্তি নিয়ে সেসব প্রয়োগ করতে যেয়ে বহিষ্কার হন স্কুল থেকে। তার সে সময়কার মানসিক অবস্থা বর্ণনা করতে যেয়ে বয়লে বলেন, আমার মাথায় এত বেশি আইডিয়া খেলা করত যে, আমি ঠিক কী করব তা নিজেও বুঝে পারতাম না! সেই অস্থির দিনগুলো পেরিয়ে বয়লে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছেন তার ঠিকানাÑ আর সেটি মঞ্চে। শুরুর দিনগুলো অবশ্য অতটা ভাল ছিল না। তার ভাষায় জঘন্য সব চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে। ১৯ বছর বয়সে সুযোগ পান বিশ্বখ্যাত রয়েল ওয়েলস কলেজ অব মিউজিক এ্যান্ড ড্রামাতে। সেখানে তিন বছর নিজের অভিনয় প্রতিভায় শাণ দিয়েছেন। এরপর নির্বাচিত হন জে কে রাউলিংয়ের হ্যারি পটার এ্যান্ড দ্য কার্সড চাইল্ড-এ স্করপিয়াস চরিত্রে। যা তার মতে গত পঁচিশ বছরে কোন সাহিত্যিকের সৃষ্ট সবচেয়ে সুন্দর চরিত্র। লন্ডনের ওয়েস্ট এ্যান্ড, ব্রডওয়ে থেকে গত এপ্রিলে নিউইয়র্ক সবখানেই কার্সডের টিকেটের জন্য ছিল কাড়াকাড়ি। বয়েলকে এ মুহূর্তে বিবেচনা করা হচ্ছে মঞ্চে আগামী দিনের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় নাম। মাত্র তেইশ বছরেই স্করপিয়াস চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নিয়েছেন অলিভার এ্যাওয়ার্ড। সম্প্রতি নাথান লেনের মতো অভিনেতার পাশাপাশি মনোনীত হয়েছেন টনি এ্যাওয়ার্ডের জন্য। এই মনোনয়ন নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি সব সময় তার মতো হতে চেয়েছি। তার সঙ্গে এই মনোনয়ন আমার কাছে স্বপ্নের মতো।’ এন্থনি বয়লে মঞ্চে তার কাজ দিয়ে যোগ করবেন নতুন মাত্রা বিষয়টি কেবল সময়ের ব্যাপার। আদোয়া আবোআহ্্ ন্যাড়া মাথা, দাগযুক্ত বাঁধনো দাঁতের হাসি নিয়ে আবোআহ্ দেখতে মোটেই আর দশটা সুপার মডেলের মতো নন। তবে এই প্রথম কোন কালো আফ্রিকান সম্পাদক এ্যাডওয়ার্ড এনিনফুলের সম্পাদনায় প্রকাশিত ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত তার ছবি তাকে তুলে এনেছে সুপার মডেলের তালিকায়। ২৫ বছর বয়সী আবোআহ্ এ মুহূর্তে প্রতিনিধিত্ব করছেন শ্যানেল, বারবেরি আর রেভলনের মতো ব্র্যান্ডের। জিতে নিয়েছেন ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিলের বছরের কাক্সিক্ষত মডেলের পুরস্কার। মে-তে মেট গালায় উপস্থিত ছিলেন ভারসাচি ও সিন্ডি ক্র্যাফোর্ডদের পাশে। ঘানাইয়ান পিতার সন্তান আবোআহ্র বেড়ে ওঠা লন্ডনে। তার মতে আমার মতো মেয়েদের জন্য ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কোন জায়গা ছিল না। আমার সামনে ছিল সীমাবদ্ধতার পাহাড়। এখন তার আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণÑ আজ আর আমি কোন সীমানার পরোয়া করি না। পেছনে ফেলে আসা পথ আবোআহ্র জন্য সহজ ছিল না মোটেই। একজন টিনএজার হিসাবে নিজের ত্বক নিয়ে ভুগেছেন বিষণœতায়। একপর্যায়ে ঝুঁকে পড়েন ড্রাগসের দিকে। কথা বলায় ছিল জড়তা, তাই বন্ধ করে দেন কথা বলা। ২০১৫তে মডেলিং ক্যারিয়ারের শুরুতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে চার দিন ছিলেন কোমায়। চিকিৎসার একপর্যায়ে উপলব্ধি করেন থেরাপির গুরুত্ব। তার মতে, আপনার জীবনে যা ঘটছে তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা একাকীত্ব কমায়। যোগ দেন ‘গার্লস টক’ নামের সংগঠনে। যেখানে মেয়েরা তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে থাকে। সেখানে খুব ছোট ছোট বিষয় দিয়ে আলোচনার শুরু হলেও সেগুলো এনে দিয়েছে তার জীবনে বড় পরিবর্তন। তার কাছে নিজের সমস্যা নিয়ে সক্রিয়ভাবে কথা বলা, কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি মডেল না হলেও নিজের দায়িত্ববোধ থেকে অধিকারের পক্ষে সক্রিয় সামাজিক কর্মী হতেন। গত ফেব্রুয়ারিতে লন্ডন ফ্যাশন উইকে দেয়া তার বক্তব্যে তিনি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে যৌন হয়রানি, অন্যায় সুযোগ গ্রহণের যে প্রথা তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের যে ধারা তা পরিবর্তনের আওয়াজ তোলেন। টাইম-এর সঙ্গে কথা বলতে যেয়ে আবোআহ্ বলেন, আমাদের মাঝে এমন কেউ নেই যে এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হইনি। এই দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতেই হবে। আবোআহ্র বাহুতে আঁকা উল্কি নারী শক্তির কথা বলে। কব্জিতে আফ্রো-আমেরিকান কবির পঙ্ক্তিÑ ‘অল দ্য উইমেন। ইন মি, আর টায়ার্ড।’ ইন্সটাগ্রামে আবোআহ্র প্রথম পরিচিতিÑ তিনি একজন এ্যাক্টিভিস্ট তারপর মডেল। কাজ করতে চান পিতৃভূমি ঘানায়। বদলে দিতে চান সেখানকার মেয়েদের জীবন। তার আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণÑ আমি হারিয়ে যাবার জন্য আসিনি।
×