ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাতামুহুরীর ভাঙ্গন আতঙ্কে হাজার পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৬ জুন ২০১৮

মাতামুহুরীর ভাঙ্গন আতঙ্কে হাজার পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ চকরিয়া মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন জনপদে আবারও ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে টানা ভারি বৃষ্টিপাতের জেরে নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি কমে যাওয়ার পরপর নদীর দুই তীরে বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দেয়। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ৩০টি বসতঘর। বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে শত শত বসতঘর, দোকান-পাট, মসজিদ-মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে হাজারও পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া পরিসংখ্যান মতে, ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিগত দুই দশকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। তারা ঠাঁই করে নিয়েছে পাহাড়ী অঞ্চলে। শহররক্ষা বাঁধ ও ছিকলঘাটা-কৈয়ারবিল সড়ক, ভাঙ্গারমুখ ফাসিয়াখালী ঘুনিয়া সড়ক নদীতে বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে। লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার, কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন ও চকরিয়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র বশিরুল আইয়ুব বলেন, মাতামুহুরী নদীর তীর এলাকায় প্রায় ৬ হাজার মানুষের বসবাস। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে বর্ষাকালে যে কোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে এলাকার ফসলি জমি, দক্ষিণ খিলছাদক এলাকার লামারপাড়া ও ম-লপাড়া খতিবে আজমসহ বেশ কটি সড়ক, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। চলতি মৌসুমের বর্ষার শুরুতে পৌরসভার বিভিন্ন জনপদে কোচপাড়া পয়েন্টের বিশাল এলাকা নদীতে এবং ১০-১২টি বসতঘর এবারের বন্যার তলিয়ে গেছে। ঘুনিয়া দিগরপানখালী পয়েন্টে নদীতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম অবস্থায় রয়েছে শতাধিক বসতঘর, দোকানপাট, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ছাবেতপাড়া, চরপাড়া, কাজীরপাড়া, তরছঘাটা, জলদাশপাড়া ও বাটাখালী সেতুর দুই পাশের চারটি গ্রামের দুই শতাধিক বসতঘর। কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, মাঝেরফাড়ি, ইউনিয়ন পরিষদের সামনের এলাকা, কামাল উদ্দিন মাস্টারের ঘাটা, রুদ্রপাড়াসহ আশপাশ এলাকার বিপুল জনবসতি ভাঙ্গনে বিলীন হতে চলেছে। জানা গেছে, ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্কারি ঘূর্ণিঝড়ের পর চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে ভাঙ্গনের মাত্রা বাড়তে শুরু হয়। এখনও পাহাড়ী ঢলের প্রবল স্রোতের টানে অব্যাহত রয়েছে নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহতা। বর্তমানে সাহারবিল বাটাখালী নাপিতের টোড়া ও সুরাজপুর-মানিকপুর, কৈয়ারবিল, বিএমচর, বরইতলী, পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের আনিছপাড়া, বেতুয়াবাজার সেতু পয়েন্ট, সমসু মিয়ার হাটের জলদাশপাড়া পয়েন্ট, কোণাখালী কন্যারকুম, বাংলাবাজার, সিকদাপাড়া পয়েন্ট ও চিরিঙ্গার সওদাগর, বুড়িপুকুর পয়েন্টসহ একাধিক জনপদ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া শাখা কর্মকর্তা (এসও) তারেক বিন সগীর বলেন, মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে পাউবো ইতোমধ্যে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে নদীর ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হচ্ছে সিসি ব্লক দ্বারা টেকসই স্পার। নতুন করে যেসব এলাকায় নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, তা শনাক্ত করা হচ্ছে।
×