ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৬ জুন ২০১৮

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা প্রকল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৫ জুন ॥ কুয়াকাটায় লগ্নিকারকসহ পর্যটক এবং দক্ষিণাঞ্চলবাসী ফের শঙ্কায় পড়েছেন। সাগরের ভাঙ্গন রোধে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন এ বছর অনিশ্চিত হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রেরিত সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত সমীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানোয় এমন অনিশ্চয়তার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী বছরেও এটি বাস্তবায়ন হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল বিভাগ। ইতোমধ্যে এ বছরের বর্ষা মৌসুমের প্রথম অমাবস্যার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার তিনদিনে ছয় দফা হানা দেয় সৈকতের বেলাভূমে। প্রায় ১০ ফুট প্রস্থ সৈকত সাগর গিলে খেয়েছে। এখন কুয়াকাটা পৌরএলাকাসহ পর্যটন এলাকার মানুষ ও তাদের সম্পদসহ সকল ধরনের স্থাপনা রক্ষায় বেড়িবাঁধটিও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধের রিভার সাইটের স্লোপসহ মূল বাঁধ সাগরের ঢেউয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করে ২০১৭ সালের শেষের দিকে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশল কার্যালয় থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। সেখান থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। যা অনুমোদন শেষে এ বছর প্রকল্পের কাজ শুরুর সম্ভাবনা ছিল। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্পের বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয়-বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১২ কোটি টাকা। কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে দুই দিকে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত এলাকা নিয়ে এ প্রকল্পের সম্ভাব্য এলাকা ছিল। পশ্চিম দিকে দেড় কিলোমিটার এবং সাড়ে তিন কিলোমিটার পুবে সৈকত রক্ষায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা ছিল। গ্রীন সি ওয়াল নির্মাণের মধ্য দিয়ে শোরলাইন বরাবর স্থির থাকা। সৈকতের দেশভাগে গ্রীন সি ওয়ালের ওপর দিয়ে পর্যটকরা হাঁটাচলা করা। সি ওয়ালের ওপর ঘাস লাগানো। পরিবেশ বান্ধব। দৃষ্টিনন্দন। পর্যটক-দর্শনার্থীরাম পেত সি ওয়ালে বসে সৌন্দর্য অবলোকনের সুযোগ। সি ওয়ালটি অবস্থান ভেদে ২১ মিটার প্রস্থ এবং দুই-আড়াই মিটার উঁচু করার পরিকল্পনা ছিল। গ্রী সী ওয়ালের সামনের দিকে উত্তাল ঢেউ ঠেকাতে নির্দিষ্ট এলাইনমেন্ট বরাবর সাগরের অন্তত তিন মিটার গভীর তলদেশে জিও টিউব বসানো। যার ফলে পলি জমে বিচের পরিধি আরও বাড়ত। প্রশস্ত হতো। জিওটিউবটি এমনভাবে বসানোর পরিকল্পনা ছিল যে জোয়ারের সময় এটি পানির নিচে থাকত। পর্যটকের দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হতো না। জিওটিউবের ওপর দিয়ে সহজেই নৌকাসহ জলযান সাগর অভ্যন্তর থেকে বেলাভূমে ভিড়তে পারত। সৈকতের ভাঙ্গন রোধে এবং পূর্বের প্রশস্ততা ফিরে আনার জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল বলে পাউবো সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুই থেকে আড়াই মিটার উচ্চতার টপে প্রস্থ তিন মিটার। নিচে প্রস্থ প্রায় ১৪ মিটার থাকার প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু এ প্রকল্পটি অনুমোদন এখনও মেলেনি। কিংবা সৈকত রক্ষায় বিকল্প কোন উদ্যোগ এ বছর এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। বরং বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই উত্তাল ঢেউ একদফা হানা দিয়ে সৈকতের পরিধি অনেকটা খাটো করে দিয়েছে। ফলে কুয়াকাটার সৌন্দর্যম-িত সৈকতসহ গোটা এলাকা এখন সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বিলীনের শঙ্কায় পড়েছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন লগ্নিকারকসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ীভাবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য এ প্রকল্প প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হয়েছিল। যা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে ফের বিস্তারিত সমীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। যার জন্য এ বছর সাগরের ভাঙ্গন রোধে সৈকত রক্ষা প্রকল্পের কাজ অনিশ্চিত হয়ে গেল। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া জরুরী প্রটেকশনের উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেন এই কর্মকর্তা। কিন্তু কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি। ইতোমধ্যে গত দশ বছরে কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ এলাকা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সৈকতের বেলাভূমে এখন আর জোয়ারের সময় ওয়াকিং জোন থাকে না। মনোলোভা এ সৈকতের হাজার হাজার নারিকেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সাগরের উত্তাল ঢেউ গিলে খেয়েছে। সর্বশেষ ঈদের আগে-পরে তিনদিনের অস্বাভাবিক জোয়ার ল-ভ- করে দেয় সৈকতের প্রায় ১০ ফুট প্রস্থ দীর্ঘ এলাকা। ঝুঁকিতে পড়েছে কুয়াকাটা সৈকত ঘেঁষা পার্কসহ ফার্মস এ্যান্ড ফার্মসের অবশিষ্টাংশ। এখন ঝুঁকির শঙ্কায় রয়েছে কুয়াকাটা পৌর এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ। ২০০৪ সাল থেকে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, এ প্রকল্পটি কুয়াকাটার উন্নয়নে বহুল কাক্সিক্ষত ছিল। এখন অনিশ্চিয়তার কারণে আমরা শঙ্কিত রয়েছি। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ড. মোঃ মাছুমুর রহমান জানান, কুয়াকাটা সৈকতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ট্যুরিজম পার্ক এলাকাসহ পর্যায়ক্রমে সৈকতের বেলাভূমি ঢেউয়ের তোড়ে বিলীন রোধে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা জরুরী প্রটেকশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কুয়াকাটার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সকল পদক্ষেপ নিয়েছেন। যার বাস্তবায়ন চলছে। এ নিয়ে কারও শঙ্কার কিছুই নেই।’ তবে এখানকার মানুষ কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×