ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় এরদোগান

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৬ জুন ২০১৮

নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় এরদোগান

তুরস্কে রবিবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোটাররা ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানকে পুনর্নির্বাচিত করেছে। এর ফলে তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী হবেন। গত বছর এপ্রিলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান প্রেসিডেন্টকে এই ক্ষমতা দিয়েছে। রবিবারের নির্বাচনের পর সংবিধানটি বলবৎ হতে যাচ্ছে। -নিউইয়র্ক টাইমস। এরদোগান ১৫ বছর যাবত ক্ষমতায় আছেন। গত বছর এপ্রিলে খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে সংশোধিত নতুন সংবিধান অনুমোদিত হয়। গণভোটের পর এই প্রথম ভোটাররা সরকার নির্বাচন করল। সংশোধিত সংবিধান প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ও বিচারব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ এনে দিয়েছে। ৬৪ বছর বয়সি এরদোগান রবিবার রাতে ইস্তানবুলে তার বাসভবন থেকে টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন জনগণ পুনরায় আমার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে।’ নির্বাচনে ভোটার টার্নআউট ৯০ শতাংশ ছিল দাবি করে এরদোগান বলেন, ‘তুরস্ক গণতন্ত্রের পাঠ শিক্ষা দিয়েছে। আমি আশা করি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য কেউ উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করবে না।’ দেশটিতে এখন যে সংবিধানটি বহাল আছে সেটি চালু হয়েছিল ১৯৮২ সালে। ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর তারা ওই সংবিধান দিয়েছিল। অফিসিয়ালি তিনি ২০৩২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। তুরস্কে এবারের নির্বাচনে প্রধান ইস্যু ছিল অর্থনীতি। সম্প্রতি দেশটির মুদ্রা লিরার ব্যাপক দরপতন ঘটে এবং মুদ্রাস্ফীতির হার ১১ শতাংশে দাঁড়ায়। আরেকটি ইস্যু সন্ত্রাসবাদ। কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট গ্রুপের হুমকি মোকাবেলা করাও তুরস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংবাদদাতারা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত তুর্কী ভোটারদের মধ্যে কয়েকটি ইস্যুতে বিভাজন দেখা দেয়। একটি হলো কুর্দী ও জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে বিভক্তি এবং অপরটি ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির মধ্যে বিভক্তি। বিরোধীদের দৃষ্টিতে রবিবারের নির্বাচন ছিল কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে দেশকে রক্ষার সর্বশেষ প্রচেষ্টা। ২০১৬ সালের জুলাইতে এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান হওয়ার পর তিনি আইনজীবী, বিচারক, সরকারী আমলা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় চালান। তার এই জয়ের ফলে এবার ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা, ইরাক ও সিরিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসীর ঢল নিয়ন্ত্রণ করা জটিল হয়ে পড়তে পারে। সন্ত্রাসদমন ইস্যুতে ন্যাটো সদস্যদের সহযোগিতা করেছে তুরস্ক। তবে এরদোগান রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক যেভাবে ঘনিষ্ঠ করেছেন সেটি ন্যাটোর অন্য সদস্যদের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। তুরস্ক ইতোমধ্যেই রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নতমানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কিনেছে। রুশ সহযোগিতায় রাশিয়ায় একটি পরমাণু চুল্লি তৈরির কথাবার্তা এখন চলছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, এরদোগানের এমন যুক্তি ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তুরস্কের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ এরদোগানের ‘নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ৯৯ শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা গেছে এরদোগান পেয়েছেন ৫৩ শতাংশ এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুহারম ইনসে পেয়ে ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য প্রথমেই পরাজয় মেনে নেয়নি। তবে রবিবার মধ্যরাতে ইনসের দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বুলেন্ত তেজকান নির্বাচন পরাজয় মেনে নেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফল যাই হোক তারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। তার মতে, তুরস্কের জনগণ কারও উস্কানিতে কান দেবে না। রবিবার একই দিনে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছর নবেম্বরে এ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এরদোগান তা প্রায় দেড় বছর এগিয়ে আনেন।
×