ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সভ্য দেশের মাটিতে হৃদয়বিদারক ছবি

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৬ জুন ২০১৮

সভ্য দেশের মাটিতে হৃদয়বিদারক ছবি

২০১৫ সালে সাগরের জলে ভেসে আসা শিশু আইলানকে নিয়ে একটা লেখা, ‘শিশু আইলান ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ লিখেছিলাম। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য একটু আশ্রয়ের খোঁজে নৌকা করে পাড়ি দিতে গিয়ে অজস্র লাশের মাঝে আইলানের ছবিটি বিশ্ব বিবেককে কষাঘাত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে হিউম্যান রাইটস নিয়ে যারা সোচ্চার, তাদের দেশেই ঘটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত হিউম্যান রাইট ভায়োলেশন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ২০১৮ সালের ১২ জুনের ২ বছরের ক্রন্দনরত শিশুটির ছবি বিশ্বজুড়ে মানুষকে আবারও কাঁদিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে হৈচৈ বেঁধে যায়। অবাক কথা, জীবনে বেঁচে থাকার সংগ্রামে এতটুকু আশার আলো পাওয়ার জন্য কতই না রিস্ক নিয়ে থাকে মানুষ! রিও গ্র্যান্ড নদী দিয়ে জলযান বয়ে এসাইলাম পাওয়ার আশায় এক দল সাউথ আমেরিকান টেক্সাস সমুদ্র তীরে নামে। পথ চলাকালে কত বাধাবিপত্তি পার হয়ে লোকজন আসে। ভারতে নির্মিত ‘কমরেড ইন আমেরিকা’ সিনেমাটিতে মেক্সিকো বর্ডার ক্রসিংয়ের চিত্রটি যথাযথভাবে দেখানো হয়েছে। জুন মাসের দলটিতে প্রায় ২ ডজন শিশু, নারী, পুরুষ ছিল। দলটি তীরে নেমে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে প্রবেশ করে এবং পরিশেষে বর্ডার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এ ধরনের ঘটনা হঠাৎ করে আজকের দিনে ঘটছে না। বছরের পর বছর চলে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সে জন্যই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো বর্ডারে দেয়াল দিতে চেয়েছেন। অঙ্ক কষে দেখা গেছে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার খরচ পড়বে। বিষয়টা বাজেট ও রাজনীতির। এসাইলাম শিকাররা আগেও আসত এখনও আসছে। পার্থক্য, এখন ‘জিরো টলারেন্স।’ পরিবারের সদস্যদের পৃথকীকরণ ব্যবস্থা। তবে আপাতত এর অবসান ঘটতে চলেছে। বর্তমান প্রশাসনের এই পলিসির জন্য মা-বাবা থেকে ছেলেমেয়েদের আলাদা করে বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়। ছবির এই শিশুটিকেও মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা হয়েছে এবং এমন সময়েই ক্লিক। হন্ডুরাস থেকে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে প্রায় ১৫০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ‘ল্যান্ড অব অপরচুনিটি’ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রাখা এই শিশু এবং মায়ের কপালে কী জুটবে, তা ফেডারেল কোর্ট রায় দেবে। এটা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের পৃথকীকরণ নীতি এই সরকার চালিত এবং এই অমানবিক ব্যবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া, ডেমোক্র্যাট, এমনকি রিপাবলিকানদেরও কেউ কেউ সোচ্চার। ৪ জন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি রোজালিন কার্টার, হিলারি ক্লিনটন, লরা বুশ ও মিশেল ওবামা প্রতিবাদ করেছেন। সর্বশেষ খবর, শিশু এবং মাকে পৃথক করা হয়নি, এক সঙ্গেই রাখা হয়েছে এবং সরকারও এই অমানবিক নীতি থেকে সরে এসেছে। এই সপ্তাহের টাইম ম্যাগাজিনের কভার দেখুনÑ সেই শিশু এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২২ জুন ২০১৮ লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী
×