ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোনাল্ডোদের শেষ ষোলো নিশ্চিতের মিশনে প্রতিপক্ষ ইরান

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৫ জুন ২০১৮

রোনাল্ডোদের শেষ ষোলো নিশ্চিতের মিশনে প্রতিপক্ষ ইরান

জাহিদুল আলম জয় ॥ বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন আসরে নিজেকে রাঙিয়ে চলেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে সেরাদের একজন পর্তুগাল অধিনায়ক। সুদর্শন এই সুপারস্টারের জাদুতে ভর করেই বড় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। তবে এ জন্য প্রথমে উতরাতে হবে গ্রুপপর্বের বাধা। ‘বি’ গ্রুপে এখন পর্যন্তু দু’টি ম্যাচ খেললেও নকআউট রাউন্ড (শেষ ষোলো) নিশ্চিত হয়নি পর্তুগালের। এ জন্য ইরানের বিরুদ্ধে শেষ গ্রুপ ম্যাচে কমপক্ষে ড্র করতে হবে ইউরোপের ব্রাজিল খ্যাত দলটির। রাশিয়ার সারানস্কে পর্তুগাল-ইরান ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১২টায়। নকআউট রাউন্ডে খেলার সম্ভাবনা আছে ইরানেরও। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মরক্কোকে হারানো ইরানীরা দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে গেছে স্পেনের কাছে। তবে আজকের ম্যাচে যদি তারা জিততে পারে তাহলে বিদায় নিতে হবে পর্তুগালকে। এ জন্য ম্যাচটিকে মোটেও হাল্কা করে নিচ্ছে না পর্তুগীজরা। দলটির কোচ ফার্নান্ডো সান্টোস বলেছেন, এবারের বিশ্বকাপটা অন্যরকম হচ্ছে। দলগুলোর পার্থক্য উনিশ-বিশ। আমাদের সেরাটা খেলেই জিততে হবে ইরানের বিরুদ্ধে। কারণ সমীকরণ বলছে, হেরে গেলে আমাদের বিদায়ঘণ্টা বেজে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পর্তুগালের মতো এই গ্রুপে শেষ ষোলো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাঠে নামছে স্পেন। কালিনিনগ্রাডে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা খেলবে ইতোমধ্যে বিদায় নিশ্চিত হওয়া মরক্কোর বিরুদ্ধে। রামোস, ইস্কোরাও অন্ততপক্ষে হার এড়াতে পারলে পরের রাউন্ডে চলে যাবে। আজ রাতে চারটি ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে আটটি দল। তবে সব ছাপিয়ে রোনাল্ডোর দিকেই স্পটলাইট। সি আর সেভেনকে চ্যালেঞ্জটা দিয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন। রবিবার পানামার বিরুদ্ধে চলমান বিশ্বকাপে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেছেন টটেনহ্যাম হটস্পার তারকা। নিজের প্রথম ম্যাচে তিউনিসিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের ২-১ গোলের জয়ে দু’টি গোলই করেছিলেন তিনি। ফলে রোনাল্ডোকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫ গোল এখন কেনের। ৪টি করে গোল করে গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়ে কেনের পেছনে আছেন রোনাল্ডো ও বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু। নিজের প্রথম ম্যাচেই আলো ছড়ান রোনাল্ডো। শক্তিশালী স্পেনের বিরুদ্ধে করেন চোখ ধাঁধানো হ্যাটট্রিক। ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয়। পরের ম্যাচে মরক্কোকে ১-০ গোলে হারায় পর্তুগীজরা। জয়সূচক গোলটি করেন ওই রোনাল্ডোই। ইংল্যান্ড-পানামা ম্যাচের আগ পর্যন্ত লুকাকুর সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। কিন্তু হ্যারি কেনের আলোতে আপাতত দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। ইরানের বিরুদ্ধে তাই ফের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করার চ্যালেঞ্জ তার। দল ও সমর্থকরা আশা করছেন এই ম্যাচেও একাধিক গোল পাবেন তাদের প্রাণের তারকা। নিশ্চিত করেই রোনাল্ডোর মনের বাসনাও তাই। তবে এই মুহূর্তে দলের স্বার্থকেই বড় করে দেখছেন তিনি। রোনাল্ডো বলেন, আমার কাছে আগে দল। আমাদের নকআউট পর্ব নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক যে আমি গোল করলে সেটা দলেরও কাজে আসবে। কিন্তু দলীয় ঐক্যটাই সবার আগে। আগের ম্যাচে গোল করে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডে হাঙ্গেরির ফেরেন্সে পুসকাসকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন রোনাল্ডো। বর্তমানে ১৫২ ম্যাচে ৮৫ গোল সি আর সেভেনের। এই তালিকায় সবার ওপরে ইরানের আলী দায়ি। ১৪৯ ম্যাচে ১০৯ গোল করেন দায়ি। যেভাবে ধারাবাহিকভাবে গোল পাচ্ছেন তাতে হয়তো রোনাল্ডোর খুব বেশিদিন লাগবে না শীর্ষে উঠতে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো রেকর্ড গড়েছেন রোনাল্ডো। পর্তুগালের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা চার বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়েছেন। টানা চার বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড আছে জার্মানির উই সিলার, মিরোসøাভ ক্লোসা ও ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলের। ২০০৬ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপে করেন এক গোল। ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপেও গোল করেন মাত্র একটি করে। এবার ২০১৮ সালে ২১তম বিশ্বকাপে এক গোলের ধারা থেকে বের হয়ে এসেছেন। যেভাবে এগিয়ে চলেছেন তাতে টুর্নামেন্ট শেষে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার ‘গোল্ডেন বুট’ জিতে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এ জন্য হ্যারি কেন ও রোমেলু লুকাকুর সঙ্গে যে তীব্র লড়াই করতে হবে এটা নিশ্চিত। জাদুকরী পারফর্মেন্স দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছেন রোনাল্ডো। অথচ তারকা এই ফুটবলারের পারফর্মেন্স মনে দাগ কাটতে পারেনি স্প্যানিশ মিডফিল্ডার চেস ফেব্রিগাসের। তিনি বলেন, রোনাল্ডো যে চারটি গোল করেছেন সেগুলো প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষকের ভুলে করতে পেরেছেন। কোন গোলেই তার নিজের বিশেষ কোন নৈপুণ্য ছিল না। ব্যাখ্যা দিয়ে ফেব্রিগাস বলেন, পেনাল্টি থেকে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম গোল করেছেন রোনাল্ডো। দ্বিতীয়টি স্প্যানিশ গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়ার ভুলে। তৃতীয়টি ফ্রিকিক থেকে পেয়েছেন। আর মরক্কোর বিপক্ষে গোলটি কর্নার থেকে হেডে করেছেন। একটি গোলও কিন্তু নিজের নৈপুণ্যে করতে পারেননি। তাই বলে আমি রোনাল্ডোর কৃতিত্বকে অস্বীকার করছি না। সে দুর্দান্ত খেলোয়াড়। কিন্তু এখনও প্রত্যাশা মতো জ্বলে উঠতে পারেনি।
×