ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মর্যাদা পেয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশেও

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৫ জুন ২০১৮

মর্যাদা পেয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশেও

সমুদ্র হক ॥ কাঁঠাল- মর্যাদা পেয়ে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত ফল। কেউ কি ভেবেছিল বাংলাদেশের জাতীয় ফল একদিন বিশে^র মানুষের কাছে পৌঁছবে! তাই হয়েছে। শুধু ফল হিসেবে নয়। বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় কাঁঠালের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন খাদ্য বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোতে কাঁঠালকে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে কাঁঠালের গুণাগুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার বড় বিষয় হয়েছে। চিকিৎসকরা অনেক রোগ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে কাঁঠাল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যে মেয়েরা তাদের মুখের ব্রন ও ফর্সা না হওয়ার জন্য চিন্তিত তাদের ব্রন দূর করা এবং গায়ের রং ফর্সা করতে কাঁঠাল বড় ভূমিকা রাখে। কাঁঠাল অতিপ্রাচীন গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলের ফল। কাঁঠালের একটি ইতিহাস আছে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে গ্রিক দার্শনিক থিওফ্রাস্টান লিখেছেন- বিশ্বে একটি বৃক্ষ আছে যার ফল দেখতে অনেক বড় এবং মিষ্টি। এই বৃক্ষের ফলের ঘ্রাণ কস্তুরির মতো। ভারতবর্ষের অনেক মুণি ঋষি এই ফল খায়। বহুকাল পর জানা যায় বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই হলদে রঙের সুমিষ্ট কাঁঠাল ফলই সেই ফল। মধুপুর, ভাওয়াল গড় ও পার্বত্য অঞ্চলের উঁচু এলাকায় লালচে মাটিতে ফলন বেশি। কাঁঠালের বিজ্ঞান নাম অর্টোকার্পাস হেট্রোফিলাস। মোবাসিয়া পরিবারের অর্টোকার্পাস গোত্রের ফল। কাঁঠাল পাতা অনেক প্রাণীর পছন্দ। বিশালাকার এই ফলের বহির্ভাগ পুরু ও কাণ্টকাকীর্ণ। অন্তর্ভাগে একটি কান্ডকে ঘিরে থাকে অসংখ্য রসালো কোয়া। কোয়ার অন্তর্ভাগে থাকে একটি বড় বীজ। পাকা ও কাঁচা উভয় কাঁঠাল খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠালের নাম এঁচোড়। এঁচোড়ের তরকারির স্বাদ অনেকটা মাংসের মতো। বৃক্ষে জন্মানো ফলের মধ্যে কাঁঠাল সবচেয়ে বড়। কখনও এর ওজন ৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়। থাইল্যান্ডে কাঁঠালের নাম কানুন, মালয়েশিয়ায় নাম নাংকা। কাঁঠালের জাত অনেক। গালা, খাজা, রস খাজা, রুদ্রাক্ষি, সিলোন, গোলাপগন্ধা, চাম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ, হাজারি। তবে দেশে বেশি ফলে হাজারি জাতের কাঁঠাল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উচ্চফলনশীল (উফশী) বারি-১ ও বারি-২ জাতের কাঁঠাল উদ্ভাবন করেছে। এর ফলন বেশি। ৮ থেকে ১০ মিটার উচ্চতার প্রতিটি গাছের ফলন ১শ’ ২৫ থেকে ১শ’৫০টি। প্রতিটির ওজন ৭ কেজি থেকে ১১ কেজি পর্যন্ত। সহবাসী এই উদ্ভিদে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথকভাবে ফোটে। ডিসেম্বর ও মার্চে ফুল আসে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ খুব কম। ওজন বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা নেই। পটাশিয়ামের উৎস এই কাঁঠাল। যা উচ্চ রক্তচাপ কমায়। কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। দীর্ঘ সময় তারুণ্য ধরে রেখে বার্ধক্য অনেক দেরিতে আসে। কাঁঠালের এ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর রসায়ন প্রতিরোধ করে। সর্দিকাশি, নার্ভাসনেস, টেনশন কমায়। কাঁঠালে আছে বিপুল ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬ যা হাড়কে শক্তিশালী করে ক্ষয় রোধ করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কাঁঠালের এত গুণাগুণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কাঁঠালের প্রতি আগ্রহী হয়ে বাণিজ্য থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কাঁঠালকে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে।
×