ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাড়িচাপায় নিহতের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা অনুদান

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২৫ জুন ২০১৮

গাড়িচাপায় নিহতের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা অনুদান

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করীম চৌধুরীর পরিবারের মালিকানাধীন গাড়িচাপায় নিহত সেলিম ব্যাপারীর স্ত্রীকে ২০ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য একরামুল করীমের পরিবারের পক্ষ থেকে এই অনুদান দেয়া হয়। একরামুলের ছেলে শাবাবের বিরুদ্ধে গাড়িচালক সেলিমকে চাপা দেয়ার অভিযোগ ছিল। সেলিমের ভগ্নিপতি আব্দুল আলিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনা হয়েছে। আজ (রবিবার) সেলিমের স্ত্রী জায়না বেগমের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ২০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। আর প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এমপি সাহেব। ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন বলেছেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মহাখালীর ডিওএইচএসের অফিসে সবার উপস্থিতিতে আলোচনা হয়। এমপির পক্ষে যারা এসেছিলেন তারা আমাদের ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। মামলাটি তুলে নেয়া হবে। তবে সেলিমের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলাটি তুলে নেয়নি তার পরিবার। সেলিম ব্যাপারীর পরিবার আপোসে রাজি হওয়ায় এখন মামলার ভবিষ্যত অনিশ্চত। রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে কাফরুল থানার ওসি সিকদার মোহাম্মদ শামিম জানান, নিহত সেলিমের পরিবারের সঙ্গে এমপি একরামুল করীম চৌধুরীর আপোসের বিষয়টি জানা নেই। আপোসের বিষয়ে এখনও তাদের কিছু জানানো হয়নি। এমপির স্ত্রীর গাড়ির চাপায় সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার মামলাটি তদন্ত চলছে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর ব্যক্তিগত গ্রামীণ মোবাইল নম্বরে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে এমপি একরামুল করীম সাংবাদিকদের জানান, মোবাইলে এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। উত্তর দিতে দিতে টায়ার্ড হয়ে গেছি। সেলিম ব্যাপারীর পরিবারের সঙ্গে আপোস বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে এই সংসদ সদস্য বলেন, না...না... আমি সেখানে যাইনি...। নিহত সেলিমের বোনের স্বামী আব্দুল আলিম বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে মহাখালীর ডিওএইচএসে নায়ার প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান হোসেনের উপস্থিতিতে ওই আপোস বৈঠক হয়। সেলিম ব্যাপারীর পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি এমপি একরামুল করীমের পক্ষে কয়েকজন সেখানে ছিলেন। এমপির পক্ষে যারা এসেছিলেন, তারা আমাদের ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। পরে এমপি সাহেবের সঙ্গেও আমরা দেখা করেছি। ওই মামলাটি এখন আমরা তুলে নেব। তিনি জানান, সেলিম ব্যাপারী দুই যুগের বেশি সময় নায়ার প্রোপার্টিজের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করে আসছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর জাহাঙ্গীর গেট সংলগ্ন ফ্লাইওভারে গাড়িচাপার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর গাড়িটি দ্রুত এসে সংসদ ভবনের উল্টো দিকের ন্যাম ফ্ল্যাটে ঢুকে যায়। গাড়িটিকে অনুসরণ করেন একজন মোটরসাইকেল ও আরেকজন প্রাইভেটকার আরোহী। ওই দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, দুর্ঘটনার সময় ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন সাংসদপুত্র শাবাব চৌধুরী। অন্যদিকে শাবাবের মায়ের ভাষ্য, দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাদের একজন ড্রাইভার, শাবাব নয়। সেই রাতে দুর্ঘটনার পর গাড়ি অনুসরণ করে ন্যাম ভবনে গিয়ে এর সঙ্গে এমপিপুত্র শাবাবের ‘সম্পৃক্ততার কথা’ জানতে পারেন শামীম আশরাফি নামে ধানমণ্ডি এলাকার এক ব্যবসায়ী। রাতেই তিনি কাফরুল থানায় গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। সেদিন তিনি বলেন, ন্যাম ভবনে প্রবেশ করার আগে গার্ডকে জিজ্ঞাসা করতেই সে জানায়, ওই গাড়িতে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীমের ছেলে শাবাব চৌধুরী আছেন। মোটরসাইকেল আরোহী আরেক ব্যক্তি সেদিন শামীমের মতো অনুসরণ করে ন্যাম ভবনে গিয়েছিলেন। শাবাব চৌধুরীকে তিনি বলেছিলেন, গাড়িচাপায় একজনের মৃত্যুর ঘটনার ভিডিও তার মোবাইলে আছে। শাবাব যেন নিহতের পরিবারের কাছে গিয়ে ক্ষমা চায় এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়। কিন্তু শাবাব তাকে বলেন, আমরা সোসাইটির কোন লেভেল মেইনটেইন করি তা তো জানো। তোমরা চলে যাও।
×