ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফল ও ফলদ বৃক্ষ

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৫ জুন ২০১৮

 ফল ও ফলদ বৃক্ষ

কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী ফলদ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজধানীতে তিনদিনব্যাপী জাতীয় ফল প্রদর্শনী ঢাকাবাসীর ভেতরে বিপুল আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। প্রায় শত প্রকারের ফল প্রদর্শন বিরাট একটি কাজ বটে। সেইসঙ্গে শতাধিক জাতের আমের প্রদর্শনীও দারুণ একটি আয়োজন। ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সপ্তম স্থান অধিকার করে আছে। ‘অপ্রতিরোধ্য দেশের অগ্রযাত্রা, ফলের পুষ্টি দেবে নতুন মাত্রা’ এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফল প্রদর্শনী সার্থক হয়েছে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ। সুসংবাদ মিলেছে বছরে ১০ লাখ টন আম উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ আম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে। আমরা জানি খাদ্য ও পুষ্টির অন্যতম উৎস ফল। মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। পুষ্টিবিদদের মতে দৈনিক মাথাপিছু ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। তবে বর্তমানে এ দেশে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় মাত্র ৪০ শতাংশ। প্রতিবছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণের ফলে কৃষি জমি কমে আসছে। উন্নত বীজ, সেচ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাঠ ফসলের উৎপাদন বেড়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও উদ্যান ফসলের উৎপাদন বিশেষ করে ফলের উৎপাদন এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছেনি। কিন্তু এ দেশে যে ফলগুলো উৎপাদন হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশ পাওয়া যায় জুন থেকে সেপ্টেম্বরÑ এ চার মাসে। শীত মৌসুমে ফল প্রাপ্তির সুবিধা কম। কাজেই এ সময় ফল খাওয়ার সুযোগের অভাবে মানুষের বিশেষ করে গ্রামীণ মা ও শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগ অহরহ দেখা যায়। বিকল্প ও সুষম খাদ্য হিসেবে গ্রহণে ফলের অবদান অতুলনীয়। ফলের এসব গুরুত্বপূর্ণ দিকসহ বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি জনগণের টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে সরকার। উল্লেখ্য, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনে দেশের বিদ্যমান সুবিধাগুলোকে এখনও তেমন কাজে লাগানো হয়নি। বিশেষ করে পার্বত্য ও উপকূলীয় জেলাগুলোতে ফল উৎপাদনের যে সুযোগ রয়েছে তা অনেকটা অব্যবহৃত রয়ে গেছে, যা এ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী। ক্রমবর্ধমান পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য ফলের উৎপাদন ও এলাকা বৃদ্ধি অন্যতম উপায়। আমাদের দেশের আবহাওয়া ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বছরব্যাপী ফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে মানসম্মত চারা, কলম উৎপাদন, নতুন নতুন ফলের জাত উদ্ভাবন এবং আধুনিক উদ্যান প্রযুক্তি বিষয়ে চাষীদের দক্ষ করে তোলার জন্য প্রকল্পের আওতায় নতুন হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বলা প্রয়োজন, ফল সংরক্ষণ বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর ত্রিশ শতাংশ ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে ৪৫ জাতের ফল উৎপাদন হলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় মাত্র ১৮ জাতের ফল। সংরক্ষণ সংক্রান্ত সমস্যায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। সে কারণেই বিজ্ঞানসম্মতভাবে ফল-সবজি অর্থাৎ কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের সুবন্দোবস্ত করতে হবে। একই সঙ্গে এসব পণ্য পরিবহনের বেলায়ও বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা আবশ্যক।
×