ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৫ জুন ২০১৮

শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট

আবার ঝুঁকির মুখে পড়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। উল্লেখ্য, উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার পর ২০১৬ সালে পুরনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে মাত্র ১০টি এজেন্সিকে সে দেশে অভিবাসন শ্রমিক পাঠাতে নির্ধারণ করে দেয় মালয়েশীয় সরকার। সংঘবদ্ধ এই চক্রটি ইতোমধ্যে লক্ষাধিক কর্মীকে পাঠিয়েছে সে দেশে। এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রীর মতে এটি নিছক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, যেটি একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে দু’দেশের কতিপয় ব্যবসায়ী। নতুন চুক্তির ফলে প্রায় ১ হাজার ৫০০ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি সে দেশে লোক পাঠানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আগে যেখানে মালয়েশিয়া যেতে প্রত্যেক বাংলাদেশীর কাছ থেকে নিবন্ধন থেকে পরিবহন বাবদ মাত্র দুই হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশী ৪২ হাজার ১৮১ টাকা) নেয়া হতো, সেখানে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটটি মাথাপিছু ২০ হাজার রিঙ্গিত (৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা) আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে এই চক্রটি ইতোমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থের একটি অংশ দুই দেশের রাজনীতিবিদ ও সরকারী কর্মকর্তাদের পকেটে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশকে মানব পাচারের এই আর্থিক নিপীড়নের পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে মন্ত্রীর তরফ থেকে। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশী কর্মরত। এর বাইরেও অবৈধ কর্মরত শ্রমিক থাকা বিচিত্র নয়। তারা যে ভাল আছেন এমন কথা বলা যাবে না। স্থানীয় বাংলাদেশী দূতাবাস থেকেও তারা কোন সহায়তা পান না বললেই চলে। ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতারের বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক নেয়ার কথা রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। ধনী দেশ বিধায় কাতারের শ্রমবাজার যে আকর্ষণীয় সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তদুপরি দেশটি রূপকল্প-২০৩০-এর আওতায় বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সৌদি জোট কর্তৃক অবরোধে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশÑ কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন ও অন্যত্র বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় এবং সিরিয়া-ইরাক-ইয়েমেনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ অবস্থায় আপাতত ভরসা কাতার। তবে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে একঘরে হয়ে পড়ায় কাতারের শ্রমবাজারও নাজুক। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে মনে রাখা দরকার যে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বরং তেলের দাম নেমে যাওয়ায় অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতে হয়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে সুদহার কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। সে অবস্থায় সরকারকে একটি নমনীয় সুদহার নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে হবে। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অতঃপর চাই অবকাঠামো উন্নয়ন। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। তদুপরি শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের আধিপত্য কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই।
×