ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চারজন করে একটি খানা বা পরিবার ধরে কমপক্ষে ৪ কোটি বাড়িতে শুমারি পরিচালনা করা হবে

শুরু হচ্ছে জাতীয় কৃষিশুমারি

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৫ জুন ২০১৮

শুরু হচ্ছে জাতীয় কৃষিশুমারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ এখন আর প্রধানত কৃষি নির্ভর নয়। গত এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে শতাংশ হিসেবে কৃষির অবদান ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তাই প্রবাদ বাক্যের সমতুল্য হয়ে ওঠা ‘কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ’- কথাটি এখন তেমন উচ্চারিত হয় না। সমৃদ্ধির সোপানে চড়তে অগ্রাধিকার পাচ্ছে শিল্পখাত। তবে কৃষিকে বাদ দিয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলেও মনে করছে সরকার। এজন্য অর্থনীতিতে কৃষির অবদান বাড়ানোর ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ১০ বছর পর কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি-২০১৮ পরিচালনা করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। রবিবার প্রস্তুতিমূলক কর্মকা-ের ওপর প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এ শুমারির কার্যক্রম। আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। বিবিএস মহাপরিচালক আমীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) বিকাশ কিশোর দাস। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুমারি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মোঃ জাফর আহাম্মদ খান পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে কৃষি শুমারির পটভূমি, উদ্দেশ্য, শুমারির পরিধি, প্রশ্নপত্রের ধরণ এবং প্রকল্প সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক গাইডলাইন মোতাবেক এই শুমারি পরিচালিত হবে। তিনি শুমারির একটি কর্ম-পরিকল্পনা উপস্থাপনা করেন। এই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে শুমারির তথ্য সংগ্রহ কাজ সম্পন্ন করা হবে। দেশের অর্ধেক এলাকাব্যাপী এটি চলবে একমাস। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আরও একমাসব্যাপী চলবে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, শুমারির মাধ্যমে শস্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদসহ পোল্ট্রি সাব-সেক্টরে ও বড় পরিসরে পর্যায়ক্রমিক পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হবে। এছাড়া শুমারির মাধ্যমে কৃষি খাতের কাঠামোগত পরিবর্তন সংক্রান্ত উপাত্ত, ভূমি ব্যবহার, চাষের প্রকার ও ফসল বৈচিত্র্যের পরিসংখ্যান প্রদান, সেচ, কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত উপাত্ত পাওয়া যাবে। দেশের সকল সাধারণ খানা (পরিবার) এবং কৃষিবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক খানায় এ শুমারি পরিচালিত হবে। দেশের শহর ও পল্লী এলাকায় একই সঙ্গে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শুমারি শেষে প্রত্যেক গণনাকারী গণনা বই থেকে একটি খানা তালিকা প্রস্তুত করবে। তালিকায় মোট পরিচালনাধীন জমির পরিমাণ, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল ও মহিষ ইত্যাদির সংখ্যা এবং খানা মৎস্য চাষ ও মৎস্য শিকারে জড়িত কি না এ বিষয়ক তথ্য থাকবে। ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কাজ চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, আদম শুমারি, অর্থনৈতিক শুমারির পর পরিসংখ্যান ব্যুরোর এটিই সবচেয়ে বড় কাজ। দেশের ৬৪টি জেলার প্রতি উপজেলায় এ শুমারি পরিচালিত হবে। তাছাড়া দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে যদি গড়ে চারজন করে একটি খানা বা পরিবার ধরা হয় তাহলে কমপক্ষে ৪ কোটি বাড়িতে শুমারি পরিচালনা করা হবে। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ এখনও গ্রামে বসবাস করে, গ্রামে যারা বসবাস করেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ এখনও সরাসরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত আছেন। অন্যদিকে শহরেও শতকার প্রায় ১১ ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। জিডিপিতে বর্তমানে কৃষিখাতের অবদান শতকরা ১৫.৩৩ ভাগ? এছাড়া দেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৪৫ ভাগ এ খাতে নিয়োজিত। বিবিএস সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কৃষি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। সরকারের নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে কৃষি জমির পরিমাণ, জমির ব্যবহার, কৃষক, শস্য উৎপাদন, মৎস্য উৎপাদন এবং প্রাণিসম্পদ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রধানত কৃষি শুমারির মাধ্যমেই পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত চারটি কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে প্রথম, ১৯৮৩-৮৪ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯৬ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালে চতুর্থ কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিসংখ্যান আইন ২০১৩-তে আদম শুমারি ও অর্থনৈতিক শুমারির পাশাপাশি কৃষি শুমারি পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, লাঙল দিয়ে হালচাষের দিন ফুরিয়েছে। আধুনিক যুগে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের কৃষি। আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে, কমেছে কৃষি জমির পরিমাণ। তারপরও বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বেড়েছে বহুগণ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্য কৃষিবিষয়ক হালনাগাদ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। কৃষি শুমারি প্রকল্পটি এ উদ্দেশ্যেই নেয়া হয়েছে। এটি কৃষিখাতের উন্নয়নে নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনার প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে।
×