ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার ইইউর গাড়িতে শুল্ক বসানোর হুমকি ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৪ জুন ২০১৮

এবার ইইউর গাড়িতে শুল্ক বসানোর হুমকি ট্রাম্পের

মার্কিন পণ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাল্টা শুল্ক কার্যকরে ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ইউরোপ থেকে আমদানি করা গাড়িতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। শুক্রবার দিনের শুরুতে টুইটারে তিনি এ হুমকি দেন। খবর পলিটিকোর। টুইটারে দেয়া হুমকিতে ট্রাম্প বলেন, যদি এই শুল্ক ও বাধা সরিয়ে নেয়া না হয়, তুলে নেয়া না হয়, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আসা তাদের সব ধরনের গাড়িতে ২০ শতাংশ শুল্ক বসাবো। সেগুলোকে (গাড়ি) এখানেই বানাও। মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস জানান, আমদানি করা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে কিনা, মাসখানেক আগে থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। আগস্টের আগেই এ কাজ শেষ হবে। শুল্ক নিয়ে পাল্টাপাল্টির মধ্যেই ইউরোপের সঙ্গে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ আরও এগিয়ে নেয়ার হুমকি এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে। এ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১০ ও ২৫ শতাংশ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ইইউ হুইস্কি, মোটরসাইকেল, জুতা, কয়েক ধরনের কাপড়, ওয়াশিং মেশিন ও কমলার রসসহ বেশকিছু পণ্যে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। শুক্রবার থেকে তা কার্যকরও হচ্ছে। ইইউজোটের ২৮টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি করা প্রায় ৩২০কোটি মূল্যের পণ্য থেকে এই শুল্ক নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ইউরোপ। মার্কিন পণ্যে ইইউর শুল্ক কার্যকরের ঘটনাই ক্ষুব্ধ করেছে দেশটির প্রেসিডেন্টকে। ইইউ থেকে আমদানি করা ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে এখনই আড়াই শতাংশ শুল্ক দিতে হয়; পিকআপ ট্রাকের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ আরও বেশি, ২৫ শতাংশ। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িতে ইইউর আরোপ করা শুল্কের পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ। ইউরোপের শীর্ষ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফোকসভাগেন, দেইমলার ও বিএমডব্লিউর মতো অনেকেরই যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা আছে। জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতেই যত গাড়ি সংযুক্ত করে, সে পরিমাণ গাড়ি তারা জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে না বলে খাত সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা গেছে। ট্রাম্পের হুমকির পরপরই ইউরোপের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম পড়তে থাকে। ফোর্ড ও জেনারেল মোটরসের মতো মার্কিন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর দরও খানিকটা কমে যায়; সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এ চিত্র পাল্টাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানিগুলোর শেয়ার মূল্য দিন শুরুর অবস্থানের ওপরেই থাকে। আমদানি করা গাড়িতে শুল্ক বসানো নিয়ে বেশ কয়েকমাস ধরেই কাজ করছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের হুমকির পর কয়েক মাসের মধ্যে চীন ও ইউরোপের গাড়িতে মোটা অঙ্কের শুল্ক বসতে যাচ্ছে বলেই ধারণা। তবে এ পদক্ষেপ ইউরোপ ও চীন থেকে আমদানি করা মার্কিন গাড়ির খাতকে ‘একেবারেই ধসিয়ে দিতে পারে’ বলেও শঙ্কা পর্যবেক্ষকদের। অভ্যন্তরীণ শিল্পের সুরক্ষা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য দেশের ভেতরেই আরও চাকরির সুযোগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছন ট্রাম্প। এরই মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা বাৎসরিক ৪৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যে বসেছে নতুন শুল্ক। পাল্টা পদক্ষেপে হাজারের ওপর মার্কিন পণ্যে শুল্ক দিয়েছে বেজিংও। উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনার কথা বলে মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে নতুন মার্কিন প্রশাসনের। চীন ও ইউরোপের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ পাল্টাপাল্টি শুল্কের লড়াই বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে বলেই শঙ্কা বিশ্লেষকদের।
×