ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এরদোগানের মেগা খাল খনন কর্মসূচীর পরীক্ষা

তুরস্কে নির্বাচন আজ

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৪ জুন ২০১৮

তুরস্কে নির্বাচন আজ

তুরস্কে আজ রবিবার প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরাদোগান পুনর্নির্বাচিত হতে এবং পার্লামেন্টে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেতে চাইছেন । তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পগুলোর প্রতি জনগণের সমর্থন এবারের নির্বাচন থেকে তা বোঝা যাবে। বিশেষ করে তিনি যে সারাদেশে বিস্তৃত একটি খাল খনন কর্মসূচী নিয়েছেন তার জনমত যাচাইয়ের কাজটিও এবারের নির্বাচন করে দেবে। নিউইয়র্ক টাইমস। এরদোগান যে খাল খনন কর্মসূচীটি হাতে নিয়েছেন সেটি পুরো তুরস্ককে দুভাগ করবে এবং তা হবে দেশের নিজস্ব বাণিজ্য রুট। এরদোগানের দাবি এই খাল ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। গত সপ্তাহে ইস্তানবুলে প্রচার চালানোর সময় এরদোগান বলেন, পানামা খাল পানামা দেশটির পরিচয় দিয়েছে। মিসরের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস সুয়েজ খাল। ইস্তানবুল খাল যেন হতে পারে আমাদের এই নগরীর জন্য মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেয়ার একটি ব্যবস্থা সে লক্ষ্যে আমি ভোটারদের সমর্থন চাই। তিনি গত ১৫ বছরে দেশটিতে যেসব পরিবর্তন এনেছেন এবারের নির্বাচন তার প্রতি জনসমর্থনের আস্থা অনাস্থা প্রকাশের একটি উপলক্ষ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি এ সময়ে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের জেলে পুরেন এবং নাগরিক অধিকার খর্ব করেছেন। যদিও এ সময় প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ বজায় থাকে এবং মধ্যবিত্তের জীবন ধারণে খুব একটা সমস্যা হয়নি। প্রায় প্রতিটি শহরেই এরদোগান নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। সাধারণ মানুষের মনে এমন ধারণা হয়েছে যে এরদোগান একজন নির্মাণ পাগল মানুষ। খাল খনন প্রকল্প এরই সর্বশেষ উদাহরণ। কেউ কেউ একে তার দূরদর্শিতার একটি নমুনা হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকে একে অপ্রয়োজনীয় খরচ মনে করেন। এরদোগান এবারের নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেড় বছর এগিয়ে এনেছেন। হতে পারে তার দুর্বল বিরোধী প্রতিপক্ষ যেন সুগঠিত হওয়ার সময় না পায় সেজন্য নির্বাচন এগিয়ে এনেছেন। কিন্তু বিরোধীরা এরই মধ্যে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলেছে। ফলে রবিবারের নির্বাচনে এরদোগান ৫০ শতাংশের ভোট পাবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। ৫০ শতাংশের কম ভোট পেলে দ্বিতীয় দফা ভোটে যেতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনী সমাবেশেই এরদোগান তার নির্মাণ কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে সব ধ্বংস করে ফেলবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন। সম্প্রতি এক সমাবেশে তিনি বলেন, তার দল একেপি সারাদেশে ২ লাখ ৮৪ হাজার শ্রেণীকক্ষ তৈরি করেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনারা কি চান কেউ এসে এগুলো সব শেষ করে দিক ?’ নির্বাচনী পোস্টারে প্রস্তাবিত খালটি প্রাধান্য পাচ্ছে। যদিও এটি খননের কাজ এখনও শুরু হয়নি। এরদোগান বলেছেন, তিনি পুনর্নির্বাচিত হতে পারলে শীঘ্রই এর পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করবেন। তবে তার সবগুলো বড় বড় প্রকল্পের মূল থিম হলো অটোমান সাম্রাজ্য থেকে কামাল আতাতুর্ক পর্যন্ত তুরস্কের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরা। কৃষ্ণসাগর থেকে মর্মর সাগর পর্যন্ত ২৮ মাইল দীর্ঘ খাল তৈরিতে ব্যয় হবে আনুমানিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। সমালোচকরা বলছেন এই খরচ ৬৫ বিলিয়নে পৌঁছাতে পারে। প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এরদোগান সাত বছর আগে যখন এই খালের কথা যখন প্রথম বলেন, তখনই অনেকে ‘ক্ষ্যাপাটে ধারণা’ বলে প্রকল্পের সমালোচনা করেছিলেন। এরদোগানের বক্তব্য, এই খাল থেকে রাজস্ব আয় হবে। খাল ব্যবহারকারী নৌযানগুলো টোল দেবে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, এই খাল ইস্তানবুলের একটি বড় অংশের প্রতিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করবে।
×