ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গিলে খাচ্ছে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২৪ জুন ২০১৮

গিলে খাচ্ছে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৩ জুন ॥ অবৈধ ও নিম্নমানের ব্যাটারিতে সয়লাব টাঙ্গাইল জেলা। এসব ব্যাটারি প্রতিদিন গিলে খাচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত। জেলা শহর ও গ্রামগুলোতে রিক্সা ও ভ্যানগাড়ির বিকল্প হিসেবে অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিক্সা। একই সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটরদের টাওয়ার, আইপিএসসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের এসব ব্যাটারি। এগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চার্জ দেয়া ছাড়াও অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে এসব ব্যাটারি। এমনকি গ্যাস ভিত্তিক মূল্যবান ক্যাপটিভ পাওয়ারের বিদ্যুত ব্যবহার করেও তৈরি হচ্ছে এসব ব্যাটারি। এ অবস্থায় সরকার দ্রুতই এসব অবৈধ ব্যাটারি তৈরির কারখানা বন্ধ ও চার্জার লাইন বিচ্ছিন্ন করার অভিযান শুরু না করলে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডসহ (আরইবি) সংশ্লিষ্ট বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, তাদের অনুসন্ধানে জেলায় ছোট-বড় বেশকিছু অবৈধ ব্যাটারি তৈরির কারখানা রয়েছে। জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এখন লক্ষাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান চলাচল করছে। এসব যানবাহন চার্জ দিতে দৈনিক প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুত খরচ হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ধরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিক্সায় প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি বিদ্যুত খরচ হচ্ছে। জানা গেছে, অধিকাংশ চালকই নামকাওয়াস্তে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইন থেকে ব্যাটারি চার্জ করিয়ে নিচ্ছেন। জেলা-উপজেলাগুলোতে ইজিবাইক চালকরা যে গ্যারেজে গাড়িগুলো রাখছেন সে জায়গাতেই রাতভর একটি গাড়ির শুধু চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিককে মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে দিচ্ছেন। নিয়মভঙ্গ করে বিদ্যুতের অপচয় করে ব্যাটারিগুলোতে চার্জ দেয়া হচ্ছে। ব্যাটারি চার্জের জন্য আলাদা করে ঘর বা গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে ইজিবাইকে চার্জ দেয়া হচ্ছে। এক একটি ঘরে একসঙ্গে ১০টি করে ইজিবাইকে একটানা ৮ ঘণ্টা করে চার্জ দেয়া হচ্ছে। এজন্য তাদের খরচ হচ্ছে ১৫০ টাকা। সূত্র জানায়, এক সময় চীন থেকে এ ধরনের ব্যাটারি আমদানি করা হতো। এতে সরকার প্রতিবছর চার হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পেত। এক পর্যায়ে দেশে শুরু হয় ব্যাটারি উৎপাদন। প্রাথমিকভাবে ভলভো, হ্যামকো, গ্যাস্টন, রহিম আফরোজসহ কয়েকটি দেশীয় কোম্পানি উন্নতমানের ব্যাটারি তৈরি শুরু করে। কিন্তু দিনদিন ব্যাটারির চাহিদা বাড়তে থাকায় একটি সিন্ডিকেট অবৈধ ব্যাটারি তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। এসব কারখানা থেকে ব্যাটারি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাটারি নিম্নমানের হওয়ায় গড়ে ৩ থেকে ৪ মাসের বেশি সময় এগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। পাশাপাশি মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ। ব্যাটারিতে ব্যবহৃত এসিড, লেড (সিসা), পিপি, সেপারেটর, টিব্যুলার ব্যাগ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিবেশ আইন অনুযায়ী ব্যাটারি কারখানাগুলো লাল শ্রেণীভুক্ত। এ কারণে ব্যাটারির কারখানা স্থাপনের জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ কারখানার কোন ধরনের পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এছাড়া ব্যাটারি তৈরিতে এসিড দরকার। আর এসব এসিড ক্রয়, ব্যবহার ও মজুদের জন্য কোন লাইসেন্সও নেই।
×