ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আত্মগোপনে আদম ব্যাপারী

যশোরের ৭ জন পাঁচ বছর নিখোঁজ

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২৪ জুন ২০১৮

যশোরের ৭ জন পাঁচ বছর নিখোঁজ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চৌগাছায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একই পরিবারের পাঁচজনসহ সাত ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে তারা আর ফিরে আসেনি। বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নই ওদের যেন কাল হলো। সাতটি পরিবারে প্রতিটি ক্ষণ থাকে হতাশায়। থেমে থেমে নেমে আসে কান্না। এবার ঈদে তাদের পরিবারে আনন্দের পরিবর্তে ছিল চরম হতাশা। দীর্ঘদিন বাড়ির অভিভাবকরা নিখোঁজ থাকায় চরম দরিদ্রতা ওই সাতটি পরিবারকে গ্রাস করেছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের মুক্তদাহ গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমানের ছেলে অমিত হাসান মুকুল (২৬), একই গ্রামের মৃত আত্তাব হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৭), মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে ফুলজার হোসেন (৪৬), মৃত ছবেদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৫), হায়দার আলীর ছেলে আজিজুর রহমান (২৬), একই উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে রমজান আলী (৪৫) ও দুর্গাবরকাটি গ্রামের উসমান আলীর ছেলে লিটন হোসেন (২৭) ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু তারা কেউ আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। নিখোঁজদের পরিবার জানিয়েছে, সামান্য টাকায় মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে তারা আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে। মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা রাজু আহমেদ ওরফে ফজলুর রহমান তাদের ফুসলিয়ে পানি পথে মালেয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। ২০১৩ সালের ১ জুন তারা বাড়ি থেকে একযোগে বের হয়। কিন্তু তখনও পরিবারের সদস্যরা জানেন না তারা বিদেশের উদ্দেশ্যে বাড়ি ত্যাগ করছেন। ১২ জুন অমিত হাসান মুকুল তার বাড়িতে ফোন করে জানান, আমরা সকলেই পানি পথে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছি। ট্রলারে উঠা হয়ে গেছে এখনই রওনা দিবে। ওই কথাই তাদের পরিবারের সাথে শেষ কথা। এরপর এত বছর পার হলেও পরিবারের স্বজনরা তাদের কোন সন্ধান পায়নি। নিখোঁজের ৩ মাস পার হলে প্রতিটি পরিবারে চরম হতাশা নেমে আসে। একপর্যায়ে নিখোঁজের স্বজনরা মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই আদম ব্যাপারী রাজুর কাছে যান এবং তাদের সন্তানদের ফিরে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এ সময় রাজু তার সহযোগী কক্সবাজারের টেকনাফের অপর আদম ব্যাপারী রাশিদুল ইসলামের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেন। টেকনাফের দালাল রাশিদুল তাদের জানান, কোন সমস্যা নেই তারা দু-একের মধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে যাবে। পৌঁছানোর পর চুক্তি মোতাবেক ২ লাখ ১০ হাজার করে টাকা দিতে হবে। কিছুদিন পরই মুক্তদাহ গ্রামের ঘর জামাই দালাল রাজু তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে রাতের আঁধারে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে টেকনাফ ও মুক্তদাহ গ্রামের দালালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তাদের স্বজন, এমনকি কোন দালালের সন্ধান পাননি ওই পরিবারগুলো। এ বিষয়ে মুকুলের পরিবারের লোকজন জানান, আমরা ঘটনার প্রথম দিকে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ছোটাছুটি করেছি। কিন্তু আদম ব্যাপারীদের কোন সন্ধান পাইনি। আমাদের গ্রামের পাঁচজন, রুস্তমপুর গ্রামের একজন, দুর্গাবরকাটি গ্রামের একজনসহ ঝিকরগাছা উপজেলার আরও ৮ জন এই দালালদের খপ্পরে পড়ে পানি পথে মালয়েশিয়ায় রওনা দেয়। কিন্তু পাঁচটি বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত কারো কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। বর্তমানে এ সব পরিবারে সীমাহীন দারিদ্র্য নেমে এসেছে। অনেকের পরিবারের লোকজন ছেঁড়া কাপড় পরও জীবন যাপন করছে। বলাচলে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে নিখোঁজদের পরিবার। এবারের ঈদে তারা কেনাকাটা করতে পারেনি। চরম হতাশ আর শোকাবহ পরিবেশে তাদের ঈদ কেটেছে। তারা এও জানে না পরিবারের লোকজন বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। বেঁচে না থাকলে তাদের লাশ কোথায়? আর বেঁচে থাকলে তারা কোথায় আছে। নিশ্চিত তথ্যটি পেতে অধীর অপেক্ষায় দিনগোনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
×