ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাজেট আলোচনায় তোফায়েল

শেখ হাসিনার পতাকা আছে বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধী বিচার হয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৪ জুন ২০১৮

শেখ হাসিনার পতাকা আছে বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধী বিচার হয়েছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাজনীতি করেন। শেখ হাসিনার হাতে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা দিয়েছিলাম বলেই জাতির পিতার হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধপরাধীদের বিচার হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপিত হয়েছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ, সরকারী দলের নুরুল ইসলাম সুজন, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, বিরোধী দলের চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতি পিতা বঙ্গবন্ধুর দুটি স্বপ্ন ছিল। একটি স্বাধীনতা, অপরটি দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তর করা। একটি তিনি করে গেছেন, আরেকটি তিনি করতে পারেন নাই। বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা নিজের হাতে নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে। সততার সঙ্গে তিনি আজকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন একটা সিদ্ধান্ত নিলে ফাঁসির মঞ্চে গেলেও অবিচল থাকতেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও তাই। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাজনীতি করতেন, শেখ হাসিনাও লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাজনীতি করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ভিশনারি নেতা ছিলেন, দূরদর্শীসম্পন্ন নেতা ছিলেন। তিনি যেটা বলতেন, যেটা চিন্তা করে বলতেন, যা একবার বলতেন ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও আপোস করতেন না। ঠিক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও তাই। যেটা বলেন ভেবে চিন্তেই বলেন, কারও কথায় কান দেন না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর এই সাড়ে ৯টি বছরে বাংলাদেশকে তিনি কোথায় নিয়ে গেছেন? সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল, সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়েছে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর কন্যর হাতে যদি পতাকা না দিতাম তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না, তাঁর হাতে পতাকা না দিলে যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত রাজাকারের বিচার হতো না। তাঁর হাতে পতাকা না দিলে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ হতো না। তিনি বলেন, উন্নত দেশ হলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে আমরা যে সুযোগ-সুবিধা পাই, আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমরা ডিউটি ফ্রি মার্কেট এক্সেস পাই এইটা হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছি। এইটা আমরা জিএসপি প্লাস হিসেবে আখ্যায়িত করে সেটা তাদের কাছে পাব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শুধু মধ্যম আয়ের দেশ হবে না, বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশে পরিণত হবে। সব দিক থেকেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আরেক প্রবীণ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে বাংলাদেশকে ধ্যানধারণার একটি প্রদেশ বানানোর চক্রান্ত শুরু হয়। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে দেশকে পিছিয়ে দেন। জনগণকে মিথ্যা বলে দীর্ঘসময় বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশকে ধ্বংস করে গেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একইভাবে চলছে। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু প্রত্যেকটি কাজ শুরু করেছিলেন। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার বাইরে এই দেশে কোন অর্জন নেই। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে চরম নৈরাজ্য, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, লুটপাটের বিষয়ে বাজেটে একটি কথাও বলা নেই। বাজেটে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোন দিক-নির্দেশনা নেই। সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় না এবার তা প্রমাণ হয়েছে। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে বাজেট বাস্তবায়ন হবে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী জুলাই মাস থেকে সব মুক্তিযোদ্ধাদের শতভাগ চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে। তবে এ বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের সামান্য কিছু দাবি আসে নাই। তবে পহেলা বৈশাখ ও বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধার া ভাতা পাচ্ছেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও ভাতার দাবিসহ কিছু প্রস্তাব করেছি আমরা। মুক্তিযোদ্ধাদের এসব দাবি পূরণে মাত্র ৩৬০ কোটি টাকার প্রয়োজন। আশা করি অর্থমন্ত্রী এ বিষয়টি মেনে নেবেন। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ইতিহাসের প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটনের জন্য একটা ‘ফ্যাক্টস্ ফাইন্ডিং কমিশন’ গঠনের। কেননা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে একজন গুপ্তচর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা বের করার জন্য একটি তদন্ত কমিশন প্রয়োজন। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার হয়েছে তবে এর সঙ্গে আরো যারা জড়িত ছিলেন তাদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন। জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, আওয়ামী লীগ যদি বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়, সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেয় তখন বলবে দেশে গণতন্ত্র আছে। বিএনপির অপরাধ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের অস্তিত্ব অস্বীকার করে একজন মানুষ সেদেশে একদিনও থাকতে পারবে না। দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই দেশকে অস্বীকার করেও বিএনপি নেত্রী জেলে আছে, ফাঁসি হয়নি। ব্যাপক উন্নয়নের পরও আত্মতুষ্টির কোন সুযোগ নেই, এতে বিপদ বাড়বে। প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে দেশকে লুটেপুটে খেয়েছে বলেই জিয়া পরিবারকে আজ করুণ পরিণতি ভোগ করছে। দুর্নীতির দায়ে বিএনপি নেত্রীকে জেলে থাকতে হচ্ছে। দেশের মানুষ আর কোনদিন ভুল করবে না, দুর্নীতিবাজ জিয়া পরিবারকে আর কোনদিন ভোট দেবে না। কারণ এরা ক্ষমতায় আসলে দেশকে আবার পিছিয়ে দেবে, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, খুনী-দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে।
×