ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে ১২ হাজার নারী স্বাবলম্বী

ক্ষুধামুক্ত জীবন, অভাবমুক্ত সংসার- নারী জাগরণে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ জুন ২০১৮

ক্ষুধামুক্ত জীবন, অভাবমুক্ত সংসার- নারী জাগরণে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ বিয়ের আগে ও পরে নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ- কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের কতিপয় ফতোয়াবাজ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ ফতোয়া জারি করায় শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনজীবনে দারিদ্র্য লেগেই ছিল। গৃহকর্তার সামান্য উপার্জনে কোনমতে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থায় চলছিল গ্রামীণ জীবন। ফলে অভাবের সংসারে মহামারি আকারে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিংয়ের (যৌন হয়রানি) ঘটনা ছিল দেশব্যাপী। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হারের পাশাপাশি কর্মহীন বেকার থাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছিল অসংখ্য যুবক। নারীদের নিয়ে দেয়া ফতোয়াবাজদের মুখে কুলুপ সেঁটে দিয়ে সর্বত্র নারী জাগরণের মাধ্যমে আজ শিক্ষিত সমাজ গঠনসহ ক্ষুধামুক্ত জীবন, অভাবমুক্ত সংসার, বাল্যবিয়ে ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, ঘরে ঘরে চিকিৎসা সেবা এবং শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মক্ষম করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা জাতি। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাল্যবিয়ে বন্ধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। হাতের মুঠোয় এখন সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এসবের মূলে রয়েছেন সমাজের নারী জাগরণের অগ্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই (প্রধানমন্ত্রী) অনুপ্রেরণায় গ্রামের নারী কৃষিভিত্তিক নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবারিক আয়ে ভূমিকা রেখে সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করছেন। পাশাপাশি দরিদ্রতা কমায় স্বাবলম্বী নারী আজ সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব কাজে উৎসাহিত হয়ে বরিশাল সদর উপজেলার দারিদ্র্য নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী এস আর সমাজকল্যাণ সংস্থা। মাত্র এক যুগের মধ্যে সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ৯০টি ওয়ার্ডের দুস্থ নারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের (অফেরতযোগ্য) মাধ্যমে গবাদি পশুসহ হাঁস ও মুরগি পালন এবং পুরুষরা কৃষি জমি রোপণের মধ্য দিয়ে এখন পুরোপুরি স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি এসব এলাকার দারিদ্র্য পরিবারের মেধাবী সন্তানের লেখাপড়ার খরচ-পরীক্ষার ফি প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহযোগিতা, বিধবা, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা এবং গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসায় সবধরণের সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করে অসহায় মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন। ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নারীদের নিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট ও পুরুষদের নিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি পর্র্যায়ক্রমে সুবিধাবঞ্চিতদের তালিকা তৈরি করে সংস্থায় জমা দেয়ার পর অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সমাজ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সরেজমিন পরিদর্শন করে পর্যাপ্ত পরিমাণ সহযোগিতা করেন। এভাবেই এক যুগে সদর উপজেলার দুস্থ পরিবারের ১২ হাজার নারী আজ পুরোপুরি স্বাবলম্বী হয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, সরকারী চাকরীজীবীসহ এ সংস্থায় অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে এ সংস্থাটি সদর উপজেলার চাহিদা পূরণ করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত অংশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাহউদ্দিন রিপন এ কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রেখেছেন সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। পবিত্র রমজান উপলক্ষে ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৯০টি ওয়ার্ড ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার বর্ধিত অংশের ১৪শ’ মসজিদে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে এস আর সমাজ কল্যাণ সংস্থা। এস আর সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন বলেন, সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সন্তান হিসেবে এ অঞ্চলের সকল মানুষ আমার আপনজন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে রাজপথে সক্রিয় থাকায় অনেকবার জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে উৎসাহিত হয়ে এ অঞ্চলের মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নারীদের উন্নয়নে কাজ করছে তারই ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে পড়া নারীদের সামনে অগ্রসর করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
×