ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সত্তর বছরে নিজস্ব ভবনে উঠল আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৪ জুন ২০১৮

সত্তর বছরে নিজস্ব ভবনে উঠল আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রায় তিন দশক পর নিজস্ব কার্যালয়ে উঠল দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। কয়েক দশক পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে থাকার পর দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সুদৃশ্য অত্যাধুনিক ১০তলা ভবনে এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এ দলটি প্রতিষ্ঠার প্রায় সাত দশক পর স্বয়ংসম্পূর্ণ স্থায়ী ভবন পেল। এখনই একই ছাতার তলে অর্থাৎ নিজস্ব ভবন থেকে আওয়ামী লীগ ও তাদের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনা করবে। শনিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পুরনো ঠিকানায় গড়ে ওঠা নতুন এ ইমারতের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দেন। শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। উদ্বোধন শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে ভবনের সামনে একটি বকুল ফুল গাছের চারা রোপণ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বকুলের চারা রোপণ শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে যান ও ভবনের ভেতরে ঘুরে দেখেন। ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম ও সিআরআইসহ অন্যান্য সংস্থার গবেষণা কাজ পরিচালিত হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান। দেশের সর্বাধুনিক রাজনৈতিক কার্যালয়ে রয়েছে ডিজিটাল লাইব্রেরি, কনফারেন্স লাউঞ্জ, ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা ও ক্যান্টিন সুবিধা। এখানে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি থাকছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রধান কার্যালয়। এ ভবনে রয়েছে অভ্যর্থনা ডেস্ক। সিঁড়ির দু’পাশে দু’টি লিফট রয়েছে বহুতল এ ভবনে। ভবনের বেইজমেন্ট ও প্রথম তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট এবং চতুর্থ তলা থেকে প্রতিটি ফ্লোর ৩ হাজার ১শ বর্গ ফুটের। নবম তলায় আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় বুলেটপ্রুফ। তার ফ্লোরটি করা হয়েছে বুলেটপ্রুফ ডাবল গ্লাস দিয়ে। অষ্টমতলায় সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়। তৃতীয় তলার সামনের অংশ ‘ওপেন স্কাই টেরেস’। এখানে কৃত্রিম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ফ্লোরে ২৪০ জন বসার ব্যবস্থা রয়েছে। দশ তলায় রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া। দ্বিতীয় তলায় সাড়ে তিন শ’ জনের বসার ব্যবস্থা সম্পন্ন কনফারেন্স রুম রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ফ্লোরে রয়েছে সাধারণ কার্যালয়, ডিজিটাল লাইব্রেরি, মিডিয়া রুম, বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য কক্ষ রাখা হয়েছে। ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণে পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। ভবনের সামনে বড় করে ইস্পাতের অক্ষর দিয়ে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ লেখা এবং এর পাশেই দলীয় প্রতীক নৌকা রয়েছে। ভবনের ওপরে দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একটি মুর‌্যাল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণের মুর‌্যালও রয়েছে। ভবনের সামনের দেয়ালে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগান এবং দলের চারটি মূলনীতি লেখা খোদাই করে লেখা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত ভবনটি পুরোটাই ওয়াইফাইয়ের আওতায়। ভবনটির নির্মাণশৈলীতেও রাখা হয়েছে মুন্সীয়ানা। আর যে মাটির ওপর ভবনটি ছিল, আট কাঠার সেই জমিটি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে তৈরি হয়েছে ভবনটি। ভবন ঘুরে দেখা যায়, দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য রয়েছে সুপরিসর কক্ষ। সভানেত্রীর কক্ষের সঙ্গে রয়েছে বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয়। এর আগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে বেশ কয়েকবার ঠিকানা বদল হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের। ১৯৫৩ সাল থেকে ৯, কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি কার্যালয় ব্যবহার করা হতো। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোডে আওয়ামী লীগের কার্যালয় হয়। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে আওয়ামী লীগের কার্যালয় নেন। এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলি এবং পরে পুরানা পল্টনে দু’টি স্থানে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল। এছাড়া বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসায় বাসায় দলের বৈঠক হতো।
×