ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিবাসীদের ইউরোপের প্রবেশদ্ধার আলবেনিয়া

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৩ জুন ২০১৮

 অভিবাসীদের ইউরোপের  প্রবেশদ্ধার আলবেনিয়া

কিছুদিন আগেও খুব কমসংখ্যক শরণার্থী সমৃদ্ধ ইইউ দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য তাদের বিপজ্জনক দুর্গম পাড়িতে যাত্রা বিরতি হিসেবে বেছে নেয়নি দারিদ্র্যপীড়িত দেশ আলবেনিয়াকে। কিন্তু তথাকথিত পশ্চিমাঞ্চলীয় বলকান অভিবাসন দুর্গম পথ এখন বন্ধ করে দেয়া হলেও আলবেনিয়ায় সিরীয়দের আগমন বেড়ে গেছে। -এএফপি। আলবেনিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আর্দি বাইদ এএফপিকে বলেছেন, তুরস্ক ও গ্রীস যাওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহৃত সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তাদের সীমান্ত নিরাপত্তা বেশ জোরদার করার পর অভিবাসীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে যাওয়ার নতুন পথ বের করার চেষ্টা করছে। অভিবাসীরা মেসিডোনিয়া ও সার্বিয়া হয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এখন বুলগেরিয়া ও আলবেনিয়াসহ ইইউয়ের কয়েকটি দরিদ্র দেশ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কর্তৃপক্ষ আশ্রয় প্রার্থীদের অনুরোধ সরকারী উপাত্ত প্রকাশ না করলেও পুলিশ বলেছে, তারা এ বছরের শুরু থেকে আলবেনীয় সীমান্তে ২ হাজার ৩ শ’ লোককে আটকে দিয়েছে। সিরীয় নাগরিক গুয়ান বেলাই বলে, ইইউ যাওয়ার জন্য অনেক অভিবাসীর জন্য এখন আলবেনিয়া একমাত্র সমাধান। ২৮ বছর বয়স্ক এ শরণার্থী রাজধানী তিরানায় আলবেনিয়ার একমাত্র অভিবাসী অভ্যর্থনা কেন্দ্রে এসে পৌঁছয় জুনের মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় ২ শ’ অভিবাসী বর্তমানে ১ শ’ ৮০ শয্যা বিশিষ্ট কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বেলাই এখানে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু অন্যদের মতো তার জন্যও সার্বিয়া ও মেসিডোনিয়ার বিপরীতে আলবেনিয়া এখন প্রবেশ পথ, এ বিষয়টা গোপনে করে না বেলাই। সার্বিয়া ও মেসিডোনিয়া তাদের সীমান্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে। বেলাই বলে, রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য অনেকেই অগ্রাধিকার দেয় আলবেনিয়াকে। কারণ, দেশটি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মন্টেনিগ্র ও বসনিয়া যাওয়ার জন্য প্রক্রিয়াকালে তাদের সময় দেয়। আশ্রয়প্রার্থীরা পরে মন্টেনিগ্রকে ও বসনিয়া থেকে জার্মানি, ডেনমার্ক বা অন্য কোন দেশে প্রবেশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মহাদেশের সবচেয়ে মারাত্মক অভিবাসন সঙ্কটে ২০১৫ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল সীমান্ত খুলে দিলে শরণার্থীদের জন্য জার্মানি অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়। তারপরও ১০ লাখের বেশি অভিবাসীকে অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্তে মেরকেলকে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়েছে এবং তার বর্তমান জোট হুমকির সম্মুখীন হয়। তিরানা শিবিরের নতুন অভিবাসীরা ছোট্ট ভবনটির সামনে এসে দাঁড়ায়। সম্ভবত ১ শ’ কিলোমিটার প্রত্যন্ত উত্তরে সীমান্ত অতিক্রম করে মন্টেনিগ্রকে পৌঁছুবার আশা নিয়ে। ইইউ সদস্য রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়ায় পৌঁছাবার আগে তুরস্ক গ্রীস, আলবেনিয়া মন্টেনিগ্র ও বসনিয়া অতিক্রম করতে তাদের পাড়ি দিতে হবে বন্ধুর খাড়া ও পর্বত সঙ্কুল পথ। কিন্তু ২৬ বছর বয়সী বেরিভান ও তার স্বামী আজমারকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এ দুর্ভোগ যথেষ্ট নয়। তারা চাইছে পশ্চিম ইউরোপ যেতে। সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে আফরিনের এ দম্পতি তাদের ৩ বছরের দুই যমজ মেয়ে ও দাদা-দাদিসহ চরম দুর্ভোগে পড়েছে পথ অতিমাত্রায় বিপদসঙ্কুল বলে। দম্পতি তাদের সন্তানদের আলোকচিত্র দেখিয়ে এএফপিকে বলে, তারা কাদা ও বৃষ্টিতে পায়ে হেঁটে বা ছোট্ট নৌকোয় এ পর্যন্ত অনেক মাঠ, পর্বত ও নদী অতিক্রম করেছে। তারা ১০ হাজার ইউরোর (১১ হাজার ডলার) বিনিময়ে পাচারকারীদের সহায়তায় সিরিয়া থেকে আলবেনিয়ার সীমান্তে পৌঁছায়। তারা বলে, তাদের এখানে অবস্থানের উদ্দেশ্য শুধু সময় ক্ষেপণ। যখন তারা সুযোগ পাবে যাত্রা শুরু করবে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। সিরীয় নাগরিক ইয়াসের আরনাবলিম (২২) বলে, কেউ দরিদ্র দেশ আলবেনিয়ায় অবস্থান করতে চায় না।
×