যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে। শুক্রবার থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর এ শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এসব পণ্য ইইউর দেশগুলোতে রফতানি করার সময় অতিরিক্ত ২৮০ কোটি ইউরো (২৪০ কোটি পাউন্ড বা ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার) শুল্ক গুণতে হবে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
যেসব মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বারবোন হুইস্কি, মোটরসাইকেল ও কমলার জুস। এর মধ্যে তামাক, হার্লি ডেভিডসন মোটরসাইকেল, ক্র্যানবেরি ও পিনাট বাটারসহ বেশিরভাগ পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং জুতা, কয়েক ধরনের পোষাক ও ওয়াশিং মেশিনসহ কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ইইউ পাল্টা এই শুল্ক আরোপ করল। জি-৭ সম্মেলনে বাণিজ্যবিরোধ নিয়ে সুরাহা না হওয়ায় ইউরোপ পাল্টা এ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তারা বলছেন, চীন ও মেক্সিকোর সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতিকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজ দেশের অর্থনীতির বিকাশে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করেন। রফতানির চেয়ে আমদানি বেশি হলে যে বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয় তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে ট্রাম্পের ধারণা। শুল্ক বসিয়ে ওই ভারসাম্যহীনতা কমানোর চেষ্টা করছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পাল্টা মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছিল ইইউ, মেক্সিকো ও কানাডা।
ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেন, ইইউর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক সব যুক্তি ও ইতিহাসের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঙ্কার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে আইরিশ পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তবে তিনি বলেন, এটা সব ধরনের যুক্তি ও ইতিহাসবিরোধী। আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে অবশ্যই স্পষ্ট ও যথাযথ। ইইউর ভারসাম্য ফেরাতে এবং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার আমরা সব করব। ইইউ জানিয়েছে, তারা দ্বিতীয় ধাপে মার্কিন রফতানি পণ্যের ওপর প্রায় ৩৭০ কোটি ইউরো (৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার) শুল্ক আরোপের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেবে। এই তালিকায় ১৬০টি পণ্য শুল্কের আওতায় পড়বে। যার মধ্যে সানবেড, কাগজের তোয়ালে, করডুরো প্যান্ট ও চীনামাটির বাসন অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নতুন করে আরোপ করা শুল্কের প্রভাব চার আগস্ট থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর পড়বে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাদাম, আখরোট ও ছোলাসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারকে প্রভাবিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি এই শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের। ট্রাম্পকে অবশ্য এ নিয়ে একেবারেই চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে না। বিশ্ববাজারের প্রতিকূল পরিস্থিতির শঙ্কা সত্ত্বেও এর আগে তিনি বলেছিলেন, বাণিজ্য যুদ্ধ ভাল। এতে সহজেই জয়ী হওয়া যাবে। এ মাস থেকে মেক্সিকো ধারাবাহিকভাবে মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে তিন শ’ কোটি মার্কিন ডলার শুল্ক আরোপ করেছে। যার মধ্যে শুকরের মাংস, আপেল, আলু, বারবোন হুইস্কিসহ বিভিন্ন ধরনের চীজ রয়েছে। কানাডা জানিয়েছে, তারা মার্কিন পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার শুল্ক আরোপ করেছে। যা পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন মার্চ মাসে আমদানি করা ইস্পাতের ওপর ২৫ ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন। বাণিজ্য নিয়ে মতবিরোধের জেরে জুনের প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইইউ, কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওপর এই শুল্ক কার্যকর করে। এ নিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর সম্মেলনেও অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের মতানৈক্য দেখা দেয়। কানাডার কুইবেকে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে শিল্পোন্নত অন্য দেশগুলোর শীর্ষনেতারা মার্কিন শুল্ক ও বাণিজ্য নীতি নিয়ে ট্রাম্পের মুখোমুখি হলেও কার্যকর কোন সমাধান আসেনি। এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার অজুহাতে ইইউ, কানাডা ও মেক্সিকোর ইস্পাত এবং এ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ কার্যকর করে। ইতোমধ্যে কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: