ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে দুই কাহিনী চিত্রের প্রিমিয়ার

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৩ জুন ২০১৮

  বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে দুই কাহিনী চিত্রের প্রিমিয়ার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃক্ষরাজিশোভিত সবুজ-শ্যাম কোন এক গ্রাম। শ্রাবণের সকালে ঘুম ভাঙে স্থানীয় স্কুল শিক্ষকের। ঘুম থেকে উঠে শিক্ষক চলে যান চায়ের দোকানে। চা পান করতে করতে দোকানিকে রেডিও চালু করতে বলেন। বেতারে ভয়ঙ্কর সংবাদ শুনে চমকে যান ওই শিক্ষক। খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। ক্ষমতা নিয়েছেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। এই সংবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষক। গ্রামের সদ্য বিবাহিত তরুণ রুস্তমকে নিয়ে হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। হত্যাকা-ের প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রামের পথে মিছিল করে তারা। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন মিছিল করার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে রুস্তমকে ধরে নিয়ে যায় থানায়। তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। রোধ করে দেয়া হয় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলো। এভাবেই এগিয়েছে ‘সেদিন শ্রাবণের মেঘ ছিল’ শীর্ষক কাহিনীচিত্রের কাহিনী। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার। এছাড়া একই ঘটনাকে উপজীব্য করে একই আয়োজনে প্রদর্শিত হয় ‘জনক ১৯৭৫’ শিরোনামের চলচ্চিত্র। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা- নিয়ে সহিদ রাহমানের গল্প ‘মহামানবের দেশে’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে কাহিনীচিত্র কাহিনীচিত্র দুটি। শুক্রবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে দুইটি চলচ্চিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। যৌথভাবে এ আয়োজন করে ঢাকা পদাতিক ও তিয়াসা মাল্টিমিডিয়া। উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান, সাবেক সাংসদ মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নিউজ টোয়েন্টিফোরের অনুষ্ঠান প্রধান সামিয়া রহমান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। ‘সেদিন শ্রাবণের মেঘ ছিল’ কাহিনীচিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন সহিদ রাহমান ও পরিচালনা করেছেন রাজিবুল ইসলাম রাজিব। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, রওনক হাসান, মিজানুর রহমান ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। ‘জনক ১৯৭৫’ কাহিনীচিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন শাহীন রেজা রাসেল ও পরিচালনা করেছেন আজাদ কালাম। এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, আরমান পারভেজ মুরাদ, শ্যামল মাওলা, তমালিকা কর্মকার, মিজানুর রহমান ও নাফা। নাট্যশালায় মণিপুরী নৃত্য উৎসব ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে শুরু হলো দুইদিনের মণিপুরী নৃত্য উৎসব। শাস্ত্রীয় এ নৃত্য ঘরানার গুরু বিপিন সিংহের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যৌথভাবে উৎসবের আয়োজন করেছে মণিপুরী নৃত্য সংগঠন ধৃতি নর্তনালয়, ভাবনা, কল্পতরু ও ধ্রুমেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীফ হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, ভারতের নৃত্য সমালোচক সুনীল কুঠারি, লীলা ভেঙ্কাটারমন, শিল্পকলার সঙ্গীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক সোহরাব হোসেন, নৃত্য পরিচালক লুবনা মারিয়াম প্রমুখ। পরিবেশনা শুরুর আগে ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা। বক্তারা মণিপুরী নৃত্যের প্রসারে কাজ করার জন্য আয়োজক সংগঠনগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ২৩ আগস্ট গুরু বিপিন সিংহের জন্মের শতবর্ষ। ভারতের মণিপুর রাজ্যের এ নৃত্যসাধক কলকাতা থেকে সারাবিশ্বে মণিপুরী নৃত্যকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বহু শিক্ষার্থী এ ঘরানার নৃত্য শিখছেন এবং পরিবেশন করছেন। আয়োজনের শুরুতেই আগুনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে নৃত্য পরিবেশন করেন কল্পতরু ও ধ্রুমেলের শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব, সামিনা হোসেন প্রেমা ও সুইটি দাস চৌধুরী। আরেকটি পরিবেশনায় মণিপুরী নাচের আশ্রয়ে কৃষ্ণের রূপকাহিনী উপস্থাপন করেন বিম্বাবতী দেবী। তার বাবা গুরু বিপিন সিংহ রচনা করেছিলেন এ নৃত্য। নৃত্যের জন্য বাবার লেখা গীতে কণ্ঠ দিয়েছেন মা কলাবতী দেবী। নতুন আঙ্গিকের কোরিওগ্রাফিতে সেটাই পরিবেশন করেন বিপিন সিংহের সুযোগ্য কন্যা বিম্বাবতী। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার একই মঞ্চে থাকছে মণিপুরী নৃত্য পরিবেশনা। জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের জন্মোৎসব ॥ জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের ১০৮তম জন্মদিন ছিল ২০ জুন। এ উপলক্ষে শুক্রবার আজীবন সংগ্রামী এ মানুষটির জন্মোৎসব উদ্্যাপন করল তারই হাতে গড়ে প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা। কবির নানা সৃষ্টিকর্মের পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান। সেখানে বক্তারা বর্তমান সমাজের নানা অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরে কবি সুফিয়া কামালের চিন্তা, আদর্শ ও সংগ্রামের প্রকৃত বাস্তবায়নের উপর জোর দেন। বলেন, তাকে অনুসরণ করলে সমাজের সব অন্ধকার দূর হয়ে ছড়িয়ে পড়বে আলো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মেলার ট্রান্টি বোর্ডের সদস্য কবিকন্যা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। অতিথি ছিলেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সহ-সভাপতি শিল্পী আবুল বারক আলভী ও দিল মনোয়ারা মনু, প্রবীণ সদস্য শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। শিশু সদস্য ইসরাত জাহান দিবার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখে শিশু বক্তা রাজ্যশ্রী সাহা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, এক কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ। মাদক, সন্ত্রাস, নানা অপরাধ যেমন চলছে তেমনি সেগুলোকে বন্ধে আবার আরেক ধরনের সন্ত্রাস হচ্ছে। চারদিকে যেন শুধু হিংসার প্রতিধ্বনি। আগেরকার মতো সাংগঠনিক নানা কর্মকান্ড না থাকা এর অন্যতম কারণ। মানুষ শুধু নিজের কথা ভাবছে, সামষ্টিক চিন্তা করছে না। অথচ সুফিয়া কামালের সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মানুষ। শিশুদের অভিভবাকদের কাছে অনুরোধ আপনারা আপনাদের সন্তানদের মধ্যে সামষ্টিক চিন্তার শিক্ষা দিন তাহলে সমাজের সকল অন্ধকার দূর হবে; সাম্প্রদায়িকতা, নারী পুরুষের ভেদাভেদ কিছুই তখন আর থাকবে না। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘সুফিয়া কামাল সমাজ আন্দোলন, মনুষ্যত্বের আন্দোলনের পথিকৃৎ। কুপমন্ডতা, কুসংস্কার তার মধ্যে ছিল না। সরাসরি তিনি কোন দিন রাজনীতি না করলেও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ভাবনার মানুষ ছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই আমরা আলোকিত হতে পেরেছি। তবে আলোর পরেই বোধ হয় অন্ধকার থাকে বলে আমরা আজ অবক্ষয়, অপরাধ, মাদকে নিমজ্জিত। আজকের এই সময়ে সুফিয়া কামালকে অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। আমরা কর্মের মধ্য দিয়েই তাকে ধরে রাখব এ অঙ্গীকার আজ বড়ই প্রয়োজন। আবুল বারক আলভী বলেন, তিনি মানুষকে শ্রদ্ধা করতেন, ভালবাসতেন। জীবদ্দশায় প্রতিটি শিশু সংগঠন, নারী সংগঠনের সঙ্গে থেকে সমাজের জন্য কাজ করে গেছেন। প্রগতিশীল সকল আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। বুলবুল মহলানবীশ বলেন, দেখতে ছোটখাটো এই মানুষটির কতটা তেজস্বিতা ধারণ করতেন তা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তার সেই আদর্শকে সামনে নিয়ে যেন পথ চলি আমরা। কচিকাঁচার খুদে ভাই বোনদের কণ্ঠে ‘শতাব্দীর বিবেক তুমি’ শীর্ষক উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে আয়োজনের শুরু হয়। আলোচনা শেষে ছিল শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক পর্ব। সুফিয়া কামালের ‘আশ্চর্য এমন দিন’, ‘অনেক কথার’ ও ‘ফুলকি’ কবিতার আবৃত্তির পাশাপাশি ছিল তার লেখা ‘অনন্ত সূর্যাস্ত অন্তে’ ও ‘আমার এ বনের পথে’ গানের পরিবেশনা। এ ছাড়াও ‘আমরা সবাই রাজা’, ‘প্রিয়া কি নজরিয়া’, ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’ ও ‘চাঁদ উঠেছে ঐ’ গানের সঙ্গে ছিল মনোমুগ্ধকর নৃত্য। বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ॥ বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বর্ণিল আয়োজনে উদ্্যাপিত হয়েছে দিবসটি। এ উপলক্ষে ‘বিশ্ব ভরে উঠুক মানবতার জয়গানে’ স্লোগানে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সঙ্গীতাসরের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। বিকেল ৩টায় সমাপনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রথমেই দেলোয়ার-সোনিয়ার কণ্ঠে পরিবেশিত হয় বাউল গান। এরপর অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনাসভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন লোকসঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। আলোচনায় অংশ নেন পরিষদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন তপন মাহমুদ। আলোচনা শেষে ছিল দলীয় ও একক কণ্ঠের সঙ্গীত পরিবেশনা। সম্মেলক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করে রবিরশ্মি, রবিরাগ, সুরতীর্থ, নজরুল সঙ্গীত শিল্পীপরিষদ, জাগরণ, সংস্কৃতিচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র, নিবেদন, সুরের ধারা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পী। এসব সংগঠনের পরিবেশিত কয়েকটি শিরোনাম ছিল ‘বিশ্ব সঙ্গে যোগে যেথা বিহার’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘বিশ্ব বীণা রবে বিশ্ব জগত মাঝে’, ‘আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে’, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’, ‘দাও শৈর্য দাও ধৈর্য’, ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’, ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’, ‘গান গাই আমার মনকে বুঝাই’, ‘ফিরে ফিরে ডাক দেখিরে’, ‘ওরে ওরে বঞ্চিত সর্বহারা দল’, ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’ ও ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’। একক কণ্ঠে গান শুনিয়েছেন মহাদেব ঘোষ, লাভলী দেব, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, মাহমুদুল হাসান, উর্বি প্রমুখ।
×