ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জুড়ে নষ্ট মেশিনের ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৩ জুন ২০১৮

  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জুড়ে নষ্ট মেশিনের ছড়াছড়ি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালজুড়ে নষ্ট মেশিনের ছড়াছড়ি। কোটি কোটি টাকা দামের অনেক মেশিনও মেরামতের অভাবে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেই সংশ্লিষ্টদের। ফলে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সারাদেশ থেকে আগত রোগীদের। ঢামেক হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, চারটি এক্সরে মেশিন, একটি এমআরআই মেশিন ও একটি আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন রয়েছে। সরেজমিনে বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, চারটি এক্সরে মেশিনের তিনটিই বিকল হয়ে পড়ে আছে। বিকল তিনটি মেশিনের একটি নষ্ট হয়েছে এক বছর আগে। বাকি দুটিও প্রায় সাত মাস ধরে নষ্ট। ফলে মাত্র একটি এক্সরে মেশিনের ওপর পড়েছে সব রোগীর চাপ। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে এটিও নষ্ট হওয়ার উপক্রম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেডিওলজি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ২৬ টেকনেশিয়ান ও ২৩ সহকারী আছে এই বিভাগে। কিন্তু টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন না। কাজ করেন সহকারীরা। তারা ঠিকমতো কাজ পারেন না বলে মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। ঢামেক হাসপাতালের এক্সরে রুমে গিয়েও দেখা যায়, বাবুল নামে একজন টেকনিশিয়ানের সহকারী কাজ করছেন, যদিও কাজ করার কথা ছিল সেই টেকনিশিয়ানেরই। রেডিওলজি বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, রেডিওলজি বিভাগের ইনচার্জ কামাল উদ্দিন। উনার কথামতোই সব কাজ চলে। মেশিন নষ্ট হলে ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে কাজ করানোর কথা। কিন্তু তিনি নিজেই সব করে থাকেন। মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে সর্বপ্রথমে কামাল সাহেবকেই খবর দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ঠিকমতো তদারকি না করার অভিযোগ আছে। সে কারণেই মেশিনের আজ বেহাল দশা।’ তবে তদারকি না করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার দিক থেকে সব ধরনের তদারকি করা হয়। কোন মেশিন নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার বরাবর চিঠি দেয়া হয়। একটি মেশিন প্রায় একবছর ধরে নষ্ট। সাত থেকে আটবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কোন কাজ হয়নি।’ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি এক্সরে মেশিন রয়েছে, কিন্তু নষ্ট। জানা গেল, গত ২০ এপ্রিল রাতে মেশিন ঠিকমতো কাজ না করায় ক্ষোভে বাবুল নামের এক সহকারী মেশিনে ঘুষি মারলে মেশিনটি ফেটে যায়। তখন টেকনিশিয়ানের দায়িত্বে ছিলেন সেলিম রেজা। এখনও ওই মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, ‘ঘুষি দিয়ে মেশিন নষ্ট করা হয়নি। আগে থেকেই মেশিনে সমস্যা ছিল। আঙুল দিয়ে একটু জোরে চাপ দিতেই সেটা ভেঙ্গে যায়।’ এদিকে, গত ৬ জুন হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ মালেক। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে যান ক্যান্সার বিভাগের থেরাপি সেন্টারে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্যান্সার রোগীদের জন্যে একটি ব্রেকি থেরাপি মেশিন নতুন বসানো হচ্ছে। কিন্তু সেখানেই আরও দুইটি কোটি টাকা দামের মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ক্যান্সার ওয়ার্ডের আলমগীর হোসেন নামের একজন এমএলএসএস বলেন, ‘নষ্ট একটি মেশিনের নাম এলিট-৪০, সেটা তিন বছর ধরেই নষ্ট। ‘লিন্যাক মেশিন’ নামে আরেকটি মেশিন সাত মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দেয়া যাচ্ছে না। বেসরকারী হাসপাতালে গিয়ে তাদের থেরাপি নিতে হয়। এর জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।’ আলমগীর জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন শুধু মেশিন কিনলেই হবে না, এর তদারকি প্রয়োজন। কিন্তু একটি মেশিনেরও তদারকি হয় না। এজন্যই দীর্ঘ সময় ধরে বিকল হয়ে পড়ে থাকে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসির উদ্দিন একটি অনলাইনকে বলেন, ‘এক্সরে বিভাগে কয়েকটি মেশিন নষ্ট আছে। এরই মধ্যে আমরা সেসব মেশিনের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। নষ্ট হওয়া মেশিনগুলো শীঘ্রই মেরামত করা হবে।’ জরুরী বিভাগের নষ্ট হওয়া এক্সরে মেশিন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওই এক্সরে মেশিনটি ঘুষি দিয়ে ভাঙ্গা হয়েছে নাকি চাপ লেগে ভেঙ্গে গেছে, তা তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।’ ঢামেক পরিচালক আরও বলেন, ‘কোন মেশিন নষ্ট হওয়ার পেছনে কারও গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর নষ্ট মেশিনও শীঘ্রই মেরামত করা হবে।’
×