ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাছে গাছে পাখির নীড় যেন হাঁড়ির ফ্ল্যাট

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৩ জুন ২০১৮

গাছে গাছে পাখির নীড় যেন হাঁড়ির ফ্ল্যাট

দূর আকাশে পান্থ পাখি নীড় ছেড়ে চলে যায়, অস্ত বেলায় আবার ফেরে আপন ঠিকানায়...... বনভূমি কমে যাওয়ায় পাখিরা সেই আবাস হারিয়ে ফেলছে। ওরা এখন নীড় খুঁজে ফেরে। একটা সময় গ্রাম ছিল গাছের ছায়ায় ঢাকা মায়াভরা। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ আশ্রয় নিত বৃক্ষতলে। আর পাখি গাছের শাখায় বসে দূর করত ক্লান্তি। ভোরে পাখিদের কলতানে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রকৃতি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ ও একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে খ-িত হওয়ায় প্রথম আঘাত পড়ছে আবাদি ভূমির ওপর। এরপরই কাঠুরিয়ার কুঠারের কোপ পড়েছে গাছের ওপর। প্রকৃতির বৃক্ষকে হত্যার পর কঙ্কাল দিয়ে বানানো হচ্ছে ঘরের খুঁটি ও আসবাব। পাখিরা আর যায় কোথায়। পাখিদের আশ্রয় দিতে প্রকৃতিপ্রেমীদের অনেকেই গাছের শাখায় বেঁধে দিচ্ছেন হাঁড়ি বা কলস। তাদের একজন বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী। প্রায় এক বছর আগে বগুড়ায় যোগদান করার পর নগর সৌন্দর্য, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছেন। জেলা প্রশাসকের বাংলোটি গাছগাছালিতে ভরা। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। ভেতরে গিয়ে মনে হবে প্রকৃতির মধ্যেই বাংলোটি গড়ে তোলা হয়েছে। পাখিরা এই বাংলো ও নদীর ওপর দিয়ে ওড়াউড়ি করে। ক্লান্ত হলে ও রাতে আশ্রয় নেয় বাংলোর ভেতরের বৃক্ষ ও ফল ফলাদির গাছের শাখায়। জেলা প্রশাসকের বাসভবন হওয়ায় পূর্ণ নিরাপত্তা পায়। মানুষের সঙ্গে পাখিদের মেলবন্ধন গড়ে তুলতে গেল চৈত্র মাসের শেষের দিকে ডিসি নিজ উদ্যোগে সব গাছেই ৪/৫টি করে হাঁড়ি বেঁধে দেন। পাখিরা দেখতে পায় তাদের আবাসের হাঁড়ির ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে। আনন্দে কিচিরমিচির করতে থাকে। পাখিদের আনন্দের ভাষা বুঝতে পেরে ডিসি মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন ‘পাখিরা বাসায় আসতে পারে এ জন্য অফিস আর বাসায় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি দিয়েছিলাম। সংশয় ছিল মনে বাসা পছন্দ হয় কি না। এখন দেখি বাসিন্দারা উঠেছে নতুন ফ্ল্যাটে। চলছে নতুন সংসারের গোছগাছ। আহা কি আনন্দ।’ বগুড়ার ডিসি বাংলোর গাছগাছালিতে পাখিরা খুঁজে পেয়েছে ওদের নীড়। মনে করে এটাই এখন আপন ঠিকানা। দিনভর উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে অস্ত বেলায় ফিরে আসে আপন ঠিকানায়। সকালে পাখিদের জন্য আঁধার (খাবার) দেয়া হয়। পাখিরা নির্ভয়ে বাংলোর মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছে। মানুষের সঙ্গে পাখিদের এমন মমত্ববোধে প্রকৃতিও হয়ত হেসে উঠেছে। বনভূমি যে টুকু আছে তা সংরক্ষণ করতে পারলে প্রকৃতির এত দুর্যোগ নাও আসতে পারে। দেশে বনভূমির পরিমাণ ৬৩ লাখ ৬৯ একর। এর মধ্যে ৪৬ লাখ ৫২ হাজার একর মন্ত্রণালয়ের গেজেটে আছে। যা মোট আয়তনের ১২ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা। বাংলাদেশে তা নেই। তারওপর প্রায় ৩ লাখ একর বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। এই হিসাব কাগজে কলমে। প্রকৃত হিসাব আরও বেশি। শিল্পায়ন, নগরায়ন, গৃহায়ণসহ সকল অবকাঠামো স্থাপনসহ নানা কারণে কুঠারের আঘাত পড়ছে বৃক্ষের ওপরে। মানুষের বাসভূমি হচ্ছে গগনচুম্বি। আর পাখিরা হারোচ্ছে বাসভূমি। বগুড়ার ডিসির ছোট্ট এই প্রয়াস অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×