ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে কিশোর অপরাধীরা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৩ জুন ২০১৮

চট্টগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে  কিশোর অপরাধীরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মহানগরের ১৬টি থানা এলাকায় সংগঠিত হচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। পুলিশ ও পরিবারের নজরদারির অভাব আর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিশেষ করে কিশোররা অপরাধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এদের সাপোর্ট দিচ্ছে এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৃণমূল পর্যায়ের বখাটে নেতাকর্মীরা। এেিদক, স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই এলাকার লাটভাইদের বাইকে চড়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছে বলে পুলিশের ধারণা। এছাড়াও এদের সঙ্গে ক্ষুদ্রাকৃতির ধারালো অস্ত্র থাকায় অপরাধ অনেকটা সহজ হয়েছে। খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা চলছে এলাকার লাটভাইদের সঙ্গে। বিশেষ করে স্কুল জীবনে প্রেমের ঘটনা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকার লাটভাইয়েরা এদের ব্যবহার করছে। নগরীর ১৬ থানার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এসব কিশোর অপরাধী বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে স্কুল সময়ে রাস্তায় আড্ডা মারার পাশাপাশি মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে এলাকার অভিভাবকরা পুলিশকে অবহিত করলে বা সাধারণ ডায়েরি করলে তাতে ক্ষিপ্ত হয় এসব কিশোর অপরাধীরা। আবার এলাকাভিত্তিক বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকা পেতি নেতাদের কারণেও দমানো যাচ্ছে না এদের। বরং উল্টো অপরাধের বিচার চাওয়ায় আতঙ্কে থাকতে হয় অভিভাবকদের। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এসব কিশোর অপরাধীরা দিনের বেলায় স্কুল কলেজের মোড়ে মোড়ে আর রাত হলেই এরা অবস্থান নেয় অন্ধকারচ্ছন্ন স্থানে। কিংবা এলাকাভিত্তিক মাঠে বা কোন নির্মাণাধীন ভবনের নিচে। বিশেষ করে উচ্চবৃত্ত শ্রেণীর পরিবারের সদস্যরা অত্যাধুনিক স্মার্ট মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ইউটিউব ও ভিডম্যাটসহ বিভিন্ন সাইটে নানা অপরাধের ভিডিও দেখে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সহজে আমলে নিতে চায় না। কারণ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-উপনেতা ও পেতি নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা কোন কিশোর অপরাধীর নাম শুনলে আর ঘটনার তদন্ত করে না। কারণ লাটভাইদের সঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় পুলিশের সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে। ফলে কিশোরদের অপরাধের মাত্রও অনেকটা এই কারণে কমছে না। এদিকে, এলাকাভিত্তিক লাটভাইদের বাইকে চড়ে কিশোররা ঘুরে বেড়ালেও বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এছাড়াও ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কিশোর-কিশোরীদের ক্রেতা বানাতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা। সেটম্যানু ও বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফারের নামে কিশোর কিশোরীদের বাগাতে মরিয়া এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। কিন্তু রেস্টুরেন্টে নিজেদের ব্যবস্থাপনার তথ্য ও কর্মচারীদের মনিটরিং করতে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাহিরে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কিশোর অপরাধীদের কাছে। প্রেমের প্রলোভনে কিশোরী ও তরুণীদের পটাতে মিনি চাইনিজে অন্ন ভোজন করতে গেলেও কোন এক সময় ত্রিভুজ প্রেমের বলী হচ্ছে নতুন বা পুরাতন প্রেমিক। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হালিশহরস্থ আর্টিলারী সিনেমা হলের কাছেই ঘটে যাওয়া সুমন হত্যাকা-ের জড়িত ১০ কিশোর অপরাধীকে গ্রেফতারের মাধ্যমে গর্জে উঠা কিশোর অপরাধীদের নানা তথ্য পেয়েছে। গত ১৭ জুন রাত সোয়া নয়টার দিকে সুমনসহ তার কয়েক বন্ধু সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরছিল। এসময় আর্টিলারী পোলের সামনে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ৮/১০ জনের একটি দল তাদের গতিরোধ করে। এ সময় সুমন, আলম, পারভেজসহ মোট ৪ বন্ধুর কাছ থেকে মোবাইলসহ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এই কিশোর চক্র। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হলে সুমন ও আলমের রানে চুরিকাঘাত করে কিশোর অপরাধীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় সুমন ও আলমকে চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় হলিশহর থানায় গত ১৮ জুন একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। এ মামলার জের ধরে গত ১৯ জুন রাত ও ২০ জুন দুপুর পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেফতার করে। মূলত এসব আসামিরা হালিশহর এলাকায় সংঘবদ্ধ হয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ ছিনতাই ও বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
×