ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণ-আমানতের সুদের হার

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৩ জুন ২০১৮

ঋণ-আমানতের সুদের হার

আগামী মাস তথা নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে ৯ শতাংশের বেশি সুদ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারী ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি। উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে এক অনুষ্ঠানে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে (এক অঙ্ক) নামিয়ে আনার প্রতি জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত ২০১৮-’১৯ অর্থবছরের বাজেটে সুদহার কমাতে ব্যাংকের কর্পোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। এছাড়া কম সুদে সরকারী আমানতের টাকার প্রায় অর্ধেক এখন বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোতে রাখা হচ্ছে। সুদ কমাতে ব্যাংকগুলোর অন্যান্য খরচ কমিয়ে আনার পদক্ষেপ রয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। আর এ কারণে এবার ব্যাংক ঋণের সুদ ও আমানতের সুদহার কমানো হলো। আশা করা হচ্ছে, সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতি ফিরে আসবে। ইতোমধ্যে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা স্বাগত জানিয়েছেন। এফবিসিসিআই বলছে, ঋণের সুদ কমানোর ফলে নতুন বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। দেশে কর্মসংস্থানও বাড়বে। দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাংক খাতে বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়। গত জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোর নগদ জমার বাধ্যবাধকতা বা সিআরআর ১ শতাংশ কমিয়ে ৫.৫ শতাংশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারী আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে রাখতেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত বা এডিআর সমন্বয়ের সময়ও বাড়িয়ে দেয়া হয়। সবই করা হয়েছে দেশের আর্থিক খাতে সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য সামনে রেখে। ধারণা করা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ মুনাফা বা ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিল্পঋণের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের বর্তমানে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া ঋণ নেয়ার সময় প্রক্রিয়াকরণ ফিসসহ আরও অন্য যেসব ফি নেয়া হয়, তাতে এ হার ২০ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যায়। কোন কোন ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরও বেশি সুদ নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে সুদ বা বিনিয়োগের মুনাফার হার যত সহনীয় হওয়া মানেই তা ব্যবসাবান্ধব হবে। যদিও আমাদের দেশে ঘটেছে উল্টো। ঋণের ওপর উচ্চ সুদের হারের অনেক কারণও বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয় সঠিকভাবে সমাধান করতে পারলে ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার কমানো সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষেই সম্ভব হবে। ব্যাংকিং খাতে সুবাতাস বয়ে যাক, এটাই প্রত্যাশা। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও দায়িত্বশীলতা ও কর্মগতিশীলতা জরুরী। তবে ঋণের সুদ কমাতে গিয়ে যে আমানতের সুদও কমানো হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই আমাদের আশঙ্কা।
×