ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার যুদ্ধ

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ২২ জুন ২০১৮

ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার যুদ্ধ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ঈদ শেষ। পরিবার স্বজনদের সাথে কাটানো প্রিয় সময়গুলোর মায়া কাটিয়ে এখন কর্মস্থলে ফেরার পালা। যদিও অনেক আগে থেকেই অনেকেই ফিরেছেন স্ব স্ব কর্মস্থলে। তবে যারা ঈদের ছুটির সাথে বাড়তি হিসেবে আরো দু চারদিন ছুটি নিয়েছিলেন তারাও এখন ফিরছেন। কয়েকদিন রাস্তাঘাট কিংবা পরিবহনেও বেশ ফাঁকা ফাঁকা থাকলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়েছে ঘর থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষগুলোর। শুক্রবার মানুষের ভিড় আরো বাড়ার কারণে ভোগান্তিও বেশি। যে যেভাবে পারছে বসে কিংবা দাড়িয়ে সেভাবেই ফিরছেন। আর কর্মস্থলে ফেরার এই যুদ্ধে সড়কের যানজট ও ভোগান্তিতে আছেই। তবুও থেমে নেই কেউ। গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষ। ঈদের পর থেকে গত কয়েকদিন বেশ আরামেই বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতে পারলেও শুক্রবার সপ্তম দিনে দুর্ভোগ চরমে পৌছেঁছে কর্মস্থলমুখী মানুষের। সড়কপথে এই দুর্ভোগের মাত্রাই বেশি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার মানুষ ঈদের ছুটি শেষে ফেরি ঘাটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর থেকে জানান, শুক্রবার সকাল থেকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের স্রোত নেমেছে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার মানুষ ঈদের ছুটি শেষে কাঁঠালবাড়ি ঘাট হয়ে রাজধানীতে ছুটছেন। শুক্রবারও মানুষের কর্মস্থলে ছুটে চলা অব্যাহত রয়েছে। লঞ্চ, স্পীডবোটে যাত্রীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। এ সুযোগে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে শুরু হয়েছে যাত্রী হয়রানি ও জুলুম নির্যাতন। ফলে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি জুলুম চলছে সীবোট যাত্রীদের সাথে। নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মাফিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক যাত্রীকে অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। তবুও নিস্তার নেই যাত্রীদের। গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। ঘাটে জুলুম নির্যাতন চললেও এ সব দেখার কেউ নেই। জানা গেছে, কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে প্রতিদিন ৮৭ টি লঞ্চ, ২শতাধিক সীবোট এবং রো-রোসহ ১৯টি ফেরি যাতায়াত করছে। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের সুযোগ সন্ধানী ইজারাদারের চাঁদাবাজ বাহিনী কাঁঠালবাড়ি ঘাটের সীবোট কাউন্টারে বসে ইচ্ছে-মাফিক যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করাসহ যাত্রীদের হয়রানি ও জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। ঘাটে আইন শৃঙ্খলা বাহীনীর লোকজনের কাছে অভিযোগ করেও ইজারাদার ইয়াকুব বেপারীর চাঁদাবাজ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে চাঁদাবাজ বাহিনী কাঁঠালবাড়ি ঘাট জুলুমের রাজ্যে পরিণত করেছে। ঈদের আগে থেকেই কাঁঠালবাড়ি ঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা থাকলেও প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে সীবোট যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করাসহ জুলুম নির্যাতনের মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে প্রকাশ্যেই চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের আদলে চাঁদাবাজি। ঈদের পরে কর্মস্থলে ফেরা দরিদ্র অসহায় মানুষগুলো ঢাকায় যাওয়ার জন্য কাঁঠালবাড়ি ঘাটে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। বেশি ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে তাদের সাথে প্রতি মুহূর্তে বাকবিতন্ডা করছে সীবোটের শ্রমিক সিন্ডিকেট। মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী সীবোট যাত্রী এনামূল হক বলেন, এত জুলুম সহ্য করার মতো নয়। আগের চেয়ে পদ্মা পারাপারে দূরত্ব কমেছে ৫কিমি.। অথচ, ১শ ২০টাকার ভাড়া রাতারাতি হয়ে গেল ১শ ৫০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ২শ থেকে ২শ ২০ টাকা। শুধু ঈদেই নয় এদের জুলুম চলে বারো মাস। আমরা জুলুমের শিকার হলেও এ সব দেখার কেউ নেই। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ইজারাদার ইয়াকুব বেপারী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে ঘাটে সীবোটে ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছে. দুই চার দিন পর ঠিক হয়ে যাবে। তবে ঘাটে আমার কোন লোক চাঁদাবাজী করে না। যারা চাঁদাবাজী করে তাদেরকে ধরিয়ে দিতে পারলে আইনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আতাহার বেপারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লঞ্চে ৩৫ টাকার উর্ধ্বে একটি পয়সাও বেশি নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় যাত্রীবাহী পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাককে নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া বাইপাস সড়কে প্রায় শতাধিক প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসকে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। এদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের কুরণী পর্যন্ত যানজটে খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ঈদের ছুটির পরও বাড়তি ছুটি শেষে মানুষ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এতে মহাসড়কে যান চলাচল কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে ঈদের আগে মহাসড়কের চার লেন খুলে দেয়া হলেও বর্তমানে কয়েকটি ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকাগামী যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। শুক্রবার ভোর থেকে গাড়ির চাপ আরো বেড়ে গেলে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা ১২টার দিকে মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় ঢাকাগামী যান চলাচল আটকা পড়লে যানজট স্থায়ী হয়। এক পর্যায়ে যানজট মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর উপজেলার কুরণী এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী হয়। এছাড়া মির্জাপুরের দেওহাটা থেকে মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুরাতন সড়কেও প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা রয়েছে। এদিকে টাঙ্গাইলগামী যানবাহন চলাচল করলেও মহাসড়কের মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকায় সিঙ্গেল রোড এবং রেলগেটে বেরিয়ার নামানোর কারণে যানজটে আটকা পড়তে হচ্ছে। এতে কর্মস্থলমুখী যাত্রী, যানবাহনের স্টাফ ও সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুপুর ৩টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর বাইপাস পর্যন্ত ঢাকার দিকে প্রায় ২২ কিলোমিটার এবং চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের ধেরুয়া পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। যানজট নিরসনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকলেও প্রচণ্ড তাপদাহ ও ধুলার কারণে তারা নিয়োমিত কাজ করতে পারছেন না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহাসড়কে কর্তব্যরত পুলিশের কয়েকজন অফিসার। রংপুর থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী ঢাকাগামী বাসের চালক সবুর বলেন, রাতে ছেড়ে এসেছি। সকাল ১০ টায় পৌছানোর কথা থাকলেও মনে হয় রাতের আগে যাওয়া হবে না। মির্জাপুরের দেওহাটা বাইপাস স্টেশনে কর্তব্যরত টিআই মো. ইফতেখার বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। মহাসড়কের চন্দ্রা এবং ধেরুয়া এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হলেই যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া মহাসড়ক চারলেনে উন্নিতকরণ কাজ চলায় বিভিন্ন স্থানে প্রচুর ধুলা উড়ছে। এ কারণে সামনে কিছু দেখা যায় না। ধুলার কারণে যানবাহনের চালকেরা ধীর গতিতে যান চালান। এ কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো যানজট নেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। দুপুর পর্যন্ত কোন যানজটের খবর পাওয়া যায়নি তবে বিকেলের দিকে গাজীপুর এলাকায় কিছুটা বিচ্ছিন্নভাবে যানজটের খবর পাওয়া যায়। ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরা মানুষগুলো এখন ভালোভাবে ফিরতে পারলেই যেন স্বস্তি পায়।
×