ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় ॥ আজ নেইমার তথা ব্রাজিলের অগ্নিপরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ জুন ২০১৮

জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় ॥ আজ নেইমার তথা ব্রাজিলের অগ্নিপরীক্ষা

জাহিদুল আলম জয় ॥ বেশ চাপে আছে ব্রাজিল। রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপের শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি। ‘ই’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে ১-১ গোলে ড্র করে পেলের দেশ। বোঝা হয়ে আসা এই চাপটা সরাতে চায় সেলেসাওরা। এ জন্য জয় ছাড়া বিকল্প নেই। আজ সন্ধ্যা ৬টায় এ লক্ষ্যে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামছে ব্রাজিল। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে মার্সেলো, কুটিনহো, জেসুস, পাউলিনহোদের প্রতিপক্ষ কোস্টারিকা। কোচ টিটের দল জয়ের জন্য মরিয়া থাকলেও এই মিশনে প্রধান ভরসা নেইমারই। চোটের কারণে প্রথম ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সময়ের অন্যতম সেরা এই তারকা। পুরো ৯০ মিনিট খেললেও দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময় তাকে খোঁড়াতে দেখা যায়। আনফিট নেইমারকে খেলানোয় অনেকেই সমলোচনা করেছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামার আগেও নেইমারের ফিটনেস নিয়ে সংশয় ছিল। তবে ব্রাজিলের তরফ থেকে বলা হয়েছে, শতভাগ সুস্থ হয়েই মাঠে নামতে যাচ্ছেন দলের সেরা তারকা। অবশ্য এখনও নির্ভার হতে পারছেন না বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ব্রাজিলিয়ান ভক্ত-সমর্থক। এরপরও তারা কোস্টারিকার বিরুদ্ধে নেইমারের স্বরূপে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। কি ক্লাব, কি জাতীয় দল সবখানেই দুরন্ত, দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য নেইমার। অনেক তারকা ফুটবলারের অপবাদ আছে, ক্লাবে দুর্ধর্ষ হলেও জাতীয় দলের হয়ে ম্রিয়মাণ। কিন্তু নেইমার ঠিক এর উল্টোটা। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ালে ক্লাবের চেয়েও বিধ্বংসী মেজাজে আবির্ভূত হন। বারবার তিনি এ প্রমাণ রেখেছেন। কিন্তু চলমান বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ভাল করতে পারেননি। যে কারণে ছন্দে ফিরতে মুখিয়ে আছেন সেলেসাওদের প্রাণভোমরা। কোস্টারিকা চ্যালেঞ্জের আগে নেইমার বলেন, আশাকরি প্রথম ম্যাচের চেয়ে ভাল খেলব। আমরা ভাল খেলে জিততে চাই। আমরা কোস্টারিকার ফুটেজ দেখেছি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের নিজের ফুটবলটা খেলা। ব্রাজিলের প্রধান তারকা আরও বলেন, আমি ভালভাবেই অনুশীলন করেছি। সত্যিই আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছি। আমার পা ভাল আছে। আশা করছি সবকিছু ঠিকঠাক হবে। ইনজুরির কারণে গত বিশ্বকাপে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। এবারও বিশ্বকাপের আগে ইনজুরি আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সব শঙ্কা কাটিয়ে বীরের বেশেই মাঠে ফিরেছেন। দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচেই গোল করে জানান দিয়েছেন বিশ্বকাপটা নিজের করে নিতে প্রস্তুত। প্রথম ম্যাচে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও আজ থেকেই আলো ছড়াতে প্রস্তুত পিএসজি তারকা। বিখ্যাত হলুদ জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ ছাড়া এ পর্যন্ত সবই জিতেছেন নেইমার। ২০১৩ সালে দেশকে জিতিয়েছেন কনফেডারেশন্স কাপের হ্যাটট্রিক শিরোপা। জিতেছেন কোপা আমেরিকা। ব্রাজিলের আফসোস ছিল অলিম্পিকের স্বর্ণপদক। অধরা সেই পদকটাও নেইমার জিতিয়েছেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকে। এবার পালা বিশ্বকাপ জয়ের। ব্রাজিলের হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৫ গোল করে ছুঁয়েছেন সাবেক তারকা রোমারিওকে। পেছনে ফেলার অপেক্ষায় আছেন রোনাল্ডো (৬২) ও কিংবদন্তি পেলেকে (৭৭)। কোস্টারিকার বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইসহ সব পরিসংখ্যানে প্রায় শতভাগ এগিয়ে ব্রাজিল। নেইমারদের ফিফা র‌্যাঙ্কিং যেখানে ২ সেখানে কেইলর নাভাসদের অবস্থান ২৩। এ পর্যন্ত দল দু’টি মুখোমুখি হয়েছে ১০ বার। সেখানে ব্রাজিলের ৯ জয়ের বিপরীতে কোস্টারিকার জয় মাত্র একটিতে। বিশ্বকাপের মুখোমুখি লড়াইয়ে শতভাগ সাফল্য সাম্বা ছন্দের দেশের। এ পর্যন্ত দুইবার মুখোমুখিতে দু’টিতেই জিতেছে ব্রাজিল। ১৯৯০ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে রিকার্ডো গোমেজের জয় ছিল ১-০ গোলে। আর ২০০২ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে গ্রুপপর্বে লুই ফিলিপ সোলারির দল জিতেছিল ৫-২ গোলে। ১৬ বছর আগে ওই ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে জোড়া গোল করেছিলেন সুুপারস্টার রোনাল্ডো। বাকি তিন গোল করেছিলেন এ্যাডমিলসন, রিভাল্ডো ও জুনিয়র। দারুণ এই স্মৃতি নিয়েই বিশ্বকাপে তৃতীয়বারের মতো কোস্টারিকানদের মুখোমুখি হচ্ছে সেলেসাওরা। প্রথম ম্যাচে ধাক্কা খাওয়ার পর নেইমার-কুটিনহোরা যেভাবে তেতে আছেন তাতে ২০০২ বিশ্বকাপের স্মৃতি ফিরে আসলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অন্যদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে যাওয়ায় কোস্টারিকার জন্য ম্যাচটি বাঁচা-মরার। বিশ্বকাপের লড়াইয়ে নামার আগে অনুশীলন ম্যাচেও বড় ব্যবধানে বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে রামিরেজ অস্কারের দল। তবে দলটির অধিনায়ক ব্রায়ান রুইজ সুইসদের দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তিনিও আপসেট ঘটানোর স্বপ্ন বুনছেন। কোস্টারিকান তারকা বলেন, সুইজারল্যান্ড মাঝমাঠে ব্রাজিলকে চাপে রেখেছিল। সবাই জানে মাঝমাঠ থেকে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের ভিত রচনা হয়। আমাদের দ্রুত বলের দখল নিতে হবে এবং পাল্টা আক্রমণে যেতে হবে।
×